চৌতিশা সাহিত্য পত্রিকার ৪র্থ সংখ্যা

মনোতোষ আচার্যের গুচ্ছকবিতা  

আলোর ফোটন খুঁজে

যে আলো মৃত্যুর দূত, যে আলোতে অপমৃত্যু বোনা 

কেন তবে দরজা খুলে সাজিয়েছি আবাহন ঘট  

জাতকের জন্য খুঁজি আলোর ফোটন… পৃথিবীর বন প্রান্তরে 

 অন্তহীন প্রাণদ সাগরে সাঁতরে কাটাবো কালবেলা

মিশে গিয়ে শমদায়ী সোনালি ফসলে 

আন্তর কালিতে লিখি লগ্নভ্রষ্ট  আগামীর চিঠি… 

বর্ষার প্রদোষে কেউ তুলে নেবে অশ্রুভেজা চোখের ফলকে 

পরিত্যক্ত আমলকী বন শিউরে উঠবে

ঘন ঘন ব্যাঙেদের আর্তনাদে।

সময়ের উগরানো বিষ মুছে 

হেঁটে তুমি পেরোবেই অন্ধকার সাঁকো…        

ভিক্ষাব্রত

দাতা তুমি ভগবান — এলাম তোমার দ্বারে

ভিক্ষাব্রত, সংঘ গড়ে রক্তদান সেবা

তুমি ফিরিয়ে দিচ্ছো — অপবাদ উপহার দিচ্ছো

এই তো প্রাপ্য, শ্রেয়াংসি বহু বিঘ্নানি

মাদ্রাজ থেকে এলো চিঠি

প্রসন্ন দৃষ্টির সন্ন্যাস… দূরাগত ধ্বনি ভাসে কানে

চিন্ময় ঔদার্য, কীর্তি সুমহান,প্রেরণা মহৎ

তুমি দ্বারে দ্বারে পাঠিয়েছো

সম্মিলিত চেষ্টার আকর সন্ধানে।    

ভূর্জপত্র

  

না বলা কথার বাঁকে পেকে ওঠে যন্ত্রণার মেদ 

দু’একটি স্মৃতির দিশা পথ দেখায় জানি

তবু মেঘলি রোদের তাপে দেহলি আবেগ যায় পুড়ে

হে তমোনাশ, কৃপাবদ্ধ পাথুরে আবেগ

দূরত্বের সঘন আবেগে জ্বলে ওঠো

দিব্যবাহুর মূলে বাঁধা আছে 

ভূর্জপত্রে আবশ্যক রক্ষা-শর্তগুলি…  

তিতুমীর

সেজে ওঠা ভালোবাসাগুলি চাঁদ চায়

পোশাকি গল্পের মতো ব্যক্তিগত অধিকার মেপে নেয়

শোষকের জরিপকাঠি —খোড়ো চালে সূর্য উঁকি দেয়

বাঁশঝাড়ে তিতুমীর, লালকাঁকর — রক্তের দাগ

গিরিজন গুহার আড়ালে শস্য ও জ্যোৎস্না লুটপাট

হারানো স্বপ্নের ঘাটে পা ডোবায় প্রতিশ্রুতি 

আগুন পাখির গান জমে আছে পাতায় পাতায়…     

——————————————————————————————————————————               

পৌষালী চক্রবর্তী 

অস্তিত্ব

ছাদের আলসেতে আলগোছে ঝুলে থাকা ঘুড়ির মত

লেপ্টে আছে জীবন।

এমন অসময়ে আমরা জল পাইনি একটুও

শুধু দুপুর গড়ানো 

কিছু ফুলের অস্তিত্ব দেখে 

ভেবে গেছি সারা পৃথিবীইছিল 

ঘরবাঁধার জন্য।

তবু আমরা জায়গা পেলাম

 আলসে টুকুতেই।

জীবন

আলতো হাতে ছাড়িয়ে নিচ্ছি চামড়া,মাংস,মেদ ,মজ্জা

জীবনের থেকে।

ওজন করব বলে।

একহাতে পালক লাগে অন্য হাত 

পাথরের মত ভারী ।

এই তো জীবন।

খণ্ড খণ্ড নিয়ে ডিঙ্গা ভাসনোর

পলকে কাজল হয়

অপলকে নষ্ট চোখ।

——————————————————————————————————————————-

শুভ্রাশ্রী মাইতি।

স্পর্শ।

শরীরে শরীরে ঘষামাজা শেষ হলেই দুটো শরীর নিঃশব্দে সরে যায় বিছানার দুদিকে।

মাঝে দূরত্বের আলোকবর্ষ মাপে স্পর্শকাতর রাত।

শরীরের ওপর শরীর সাজানো যত সহজ।

 হাতের ওপর হাত রাখা তত সহজ নয়।

স্পর্শপদাবলীর এই সহজ সূত্রটা সহজ ভাবে বুঝতে পারে না বলেই

মন ছোঁয়ার আগে শরীর ছোঁয়ার হুড়োহুড়ি ব্যস্ততায়

বেশিরভাগ দাম্পত্যই বিছানার নাবালকত্ব কাটিয়ে 

সাবালক হয়ে উঠতে পারে না স্বাভাবিক নিয়মে।

বিষাদসিন্ধু।

ঘন দুধের ওপর পালকের মতো ভেসে বেড়ানো 

চিকন সরের সুখগুলোকে আলাদা করে

দুঃখটাকে সযত্নে ঢেলে রেখেছি লুকানো হৃদয়পাত্রে।

দুঃখ জমতে জমতে বুকের জমিটা লোনা হয়ে উঠলে

ফোঁটায় ফোঁটায় চুঁইয়ে নামে বিষাদের তরল ধারা।

ঠোঁটের গোলাপবাগান ভিজিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে

শরীরের উত্তুঙ্গ চূড়া,গভীর গিরিখাত আর নরম তৃণভূমি।

শরীর জুড়ে জমে ওঠে ভালবাসার নরম,উর্বর পলিস্তর।

দুচোখের পাতায় সোনারঙা ফসলের স্বপ্ন আবেশ। 

অবিশ্রান্ত বিষাদ ঢেউ ভাঙতে ভাঙতে 

আমি নিজেই কখন হয়ে উঠি এক আশ্চর্য বিষাদসিন্ধু।

——————————————————————————————————————————

মনীষা কর বাগচী

ফুল ফোটাই

তুমি আমি আমরা সবাই ফুল ফোটাই জীবন বাগে

     আশায় আশায় থাকি বসে

      উন্নত শির কাব্য রসে

     সৌম্য তপন সকাল আনে

     ভালোবাসতে আকাশ জানে

দিন চলে যায় একা আমি ডুবে থাকি পূর্বরাগে।

——————————————————————————————————————————

আবদুস সালাম

অভিমান পুষে রাখি

  ম্রিয়মাণ সম্পর্ক গুলো আলগা হয়

ঠিকানা হারানো পথে ফেলে রাখি আলিঙ্গন

শব্দেরা কোলাহলে  মত্ত

অভিমান বাসা বাঁধে চেতনার ঘ‍রে

দূরের বিকেলে ঘুঘু ডাকে বলে কুমারী মা হয়

চরাচর ভেসে যায় কলঙ্কের বন‍্যায়

একেকটা প্রতারিত দিন নিঃশব্দে ঘুমায়

ধর্ম পোকারা সুড়সুড়ি দেয়

জেগে ওঠে ধর্মান্ধ মানুষ, শান দেয় তরবারিতে

——————————————————————————————————————————-

তপন তরফদার

নষ্ট প্রেম

প্রেমের স্বাদ যে আমাকে শিখিয়েছে

যাবতীয় নরম জ্যোৎস্নার বৃষ্টি ধোয়া শরীরী

রিমঝিমের শব্দের ভালবাসা দিয়েছে খোলাচুলে

আমি অঙ্ক কষে তাকে দিয়েছি বোনোজল।

রূপোর মত চকচকে আভরণের স্পর্শে

আমি মগ্ন হয়েছি পাহাড়ি ঝোরার স্রোতে

অসতর্ক চরাচরে সতর্ক দাঁড়ি না টেনে

যখন তখন কমা- সেমিকোলনে ডুবে গেছি

পাতালের অতল থেকে রসাতলের ঠিকানায়।।

——————————————————————————————————————————

হরিশঙ্কর কুন্ডু

নীরবতা

এইভাবে ক্ষয়ে যায় অনাহুত চাঁদ

শিশিরেই ভিজে গেছে মাটি আর ঘাস

বুকের কান্না শোষে মরিচীকা ফাঁদ

তবু এই বিছিন্ন দ্বীপে পরবাস

এইভাবে আদিমতার নিসংশতা মেখে

তোমার শরীর কোথাও কামিনীর ফুল

কিছু ঋণ ভালোবেসে বন্ধক রেখে

আমি করি প্রত্যাশা সেকি শুধু ভুল

এইভাবে হারিয়েছে অগণিত ঢেউ

রাতের যাপন ভোলে প্রতিশ্রুতি কথা

তৃপ্তির সুখ মেটায় সাময়িক কেউ

অসহায় রাত্রি আমার জাগায় নীরবতা

————————————————————————————–

One thought on “চৌতিশা সাহিত্য পত্রিকার ৪র্থ সংখ্যা

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started