অনলাইন চৌতিশা সাহিত্য পত্রিকার প্রথম পাক্ষিক

কবি পরিচিতি

 চিরপ্রশান্ত বাগচী

জন্ম : ৩ জানুয়ারি ১৯৫৯ । বীরভূম । বর্তমানে অবস্থান : হুগলি জেলায় ।

শিক্ষা : বাংলায় স্নাতকোত্তর ও শিক্ষক -শিক্ষণ প্রশিক্ষণ যথাক্রমে বর্ধমান ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ।

পেশা : ১৯৮৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত হুগলি জেলার সুপ্রাচীন ও নামী একটি উ মা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ।

এখন অবসৃত ।

লেখালিখি : দেশ এবিপি কৃত্তিবাস প্রসাদ চালচিত্র সাগ্নিক ট্রাপিজ আর্ষ স্রোত শ্রুতি কাগজের নৌকা প্রভৃতি পত্রিকা ।

কাব্যগ্রন্থ : তিনটি : ১। নীরা, শুধু সুনীলের নয় । ২। ভাষা, অন্তঃস্থিত আগুন । ৩ । পোশাক আশাক বিষয়ে দুয়েকটি বেআব্রু কথা ।। গল্প বা প্রবন্ধ চর্চাও চলে পাশাপাশি । অপ্রকাশিত কবিতার পান্ডুলিপি খান দশেক বাক্সবন্দী ।

সম্মান : বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাগজের নৌকা ও পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেশকাল পত্রিকা

উদ্ভিদের আত্মকথা

পাখির ঠোঁট থেকে যেভাবে কোনও ফুলফসলের বীজ ছড়িয়ে পড়ে অথবা উড়ে উড়ে দূরে কোথাও …ঠিক তেমনি করেই এই আমি ; সেইভাবেই জন্মেছি । — যেখানে মাটি থাকলেও সরস ছিলো না । মানুষ থাকলেও তাদের ভিতরে অনেকেই দ্বিপদ ছিলো না ; আর ছিলো খাদ্য বাসস্থান ও বংশবিস্তারের পরমার্থ । এভাবেই বিভিন্ন স্তরে আমার সত্তার সঙ্গে মিশে যায় মুখকোশ ও মুখের রূপবৈচিত্র্য , আলোছায়া -সংলাপ , বিষ ও মধুর আশ্চর্য সংমিশ্রণ । তবুও তারই ভিতর আমি সেই পাথরে ফোটা ফুলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলি গভীরতর । তাই আজ হাত বাড়িয়ে দেওয়া সমস্ত মানুষের দিকে তাকিয়ে জরিপ করতেই থাকি , তার হৃদয় ও মস্তিষ্ক , ভাষা ও তার ত্রিবিধ গুণ । আর ? নির্মোক ; সভ্যতার । 

——————————————————————-

যারা পথ হাঁটিতেছে পৃথিবীর পথে

সেদিন যারা পৃথিবীর পথে পায়ে পায়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো তাদের নিরাপদ আশ্রয় অভিমুখে

কয়েকটি শিশুও ছিলো সেই পথে ।

মাটির নিবিড় আকর্ষণে ওইটুকু পায়ে কতোটা জোর থাকতে পারে ?

সময় বুঝিয়ে দিয়েছে হাড়ে হাড়ে ; তোমাকে হাঁটতেই হবে, হাঁটো

যতক্ষণ না ভিতরের আলো তোমাকে আগুনের সংকেত দেয়

হাঁটতেই থাকো আর ধরিত্রীর ধুলো মেখে নাও সর্বাঙ্গে

এখানেই তোমাদের প্রকৃত পাঠশালা

যদি লক্ষ্যে পৌঁছে যাও , হে শিশু, হে আমাদের সন্ততিসন্তান —

আমি তোমাদের পা দুটো ছুঁয়ে ভিতরে প্রবেশ করে একটা নতুন বই পড়বো , পড়তেই থাকবো , নিঃশব্দে ।

—————————————————

ছায়াশরীর

কল্পনা ; সে এমন অলৌকিক নির্মাণ যে, বিজ্ঞানের মতো আগুন আর আলোর জন্ম দিতে পারে । অনুরূপ সংঘটিত ভাব ও রসের নেপথ্যে সে ছায়ার মতো ঘিরে থাকে সতত । এ যেন শূককীট থেকে প্রজাপতির নিষ্ক্রমণ । এই যে ভণিতা বস্তুত, এ কোনও সন্দর্ভের প্রাক্ কথন নয় । এ আসলে সেই বৃত্তান্ত, যেখানে ফুটে আছে অপার্থিব এক ব্রহ্মকমল ; যার দল , ঘ্রাণ আর নান্দনিকতা কদাচ প্রকাশ্য নয় ; অথচ এমনই তার সম্মোহন ; পুরুষ প্রতি মুহূর্তেই তার জন্য রচনা করে সেই ছায়ালোক । যার কোনও ক্ষুৎপিপাসা নেই । শুধুই উড়ে উড়ে মিলিয়ে যাওয়া আকাশের ভিতরে আর এক আকাশে ; গভীরতর ।

——————————————————————

কবি পরিচিতি: 

শঙ্খশুভ্র পাত্র

জন্ম: ১৮.১০.১৯৬৩, পূর্ব মেদিনীপুরের মহানগর গ্রামে,মাতুলালয়ে ৷পিতা- শ্রীমন্ত পাত্র, মাতা— রানু পাত্র ৷ ছাত্রাবস্থা থেকেই লেখালেখির শুরু ৷ছোটদের প্রিয় পত্রিকা যেমন শুকতারা, সন্দেশ, শিশুমেলা,সুসাথী, নয়ন, আলোর ফুলকি,দুষ্টু, টাপুরটুপুর,চিরসবুজলেখা, এবং প্রথম সারির সাহিত্য পত্রিকা — দেশ, সানন্দা, আনন্দবাজার পত্রিকা,নন্দন, শিলাদিত্য, যুগশঙ্খ, আপনজন, প্রসাদ, তথ্যকেন্দ্র, শব্দপথ,কবিসম্মেলন,কৃত্তিবাসসহ বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হয় ৷প্রকাশিত কবিতার বই : সাদা পাতার শোলোক (পত্রলেখা)২০০৫, নিজের ফুলের নামে ( আলো, পূর্ব মেদিনীপুর )২০১২, আত্মার সাক্ষাৎকার (সিগনেট প্রেস / আনন্দ পাবলিশার্স )২০১৭, দেখা হবে, দেখা হলে ( বোধিসত্ত্ব /বাতায়ন )২০১৮

শ্রী

অশেষ ফাল্গুনে তুমি মেঘে-মেঘে প্রতিদিন দোল…

অব্যক্ত আকাশ ঘিরে — সুরে-সুরে চতুর্দশপদী

অবন্ধুর পথে, বন্ধু — হাতে-হাত, অবাধ হিন্দোল

রাতের গহনে, গ্রহ — ঘূর্ণমান, কাল নিরবধি…

সম্পর্ক টেকে না, শুধু ঠেকে শেখা, ছন্নমতি কুহু

না- মেলালে এ-জীবন— তন্ত্রমন্ত্র, বৃথা হাঁকডাক

লালনদুহিতা— ওই অস্তসূর্যে—একবার… উঁহু…

দ্বিতীয়বারের জন্য উড়ে গেল প্রেতসিদ্ধ-কাক…

বাকরুদ্ধ-শুদ্ধাচার, সামান্য পাথর—চকমকি

আগুনের ব্যবহার— স্বপ্নপ্রভ অতীতের রং

ছন্দের বন্ধনে, ওই আরক্ত-আবেগে, তুমি, সখী

ফাগুনের ফুটে ওঠা শিমুল-পলাশে, দ্যাখো শ্রম ৷

ঋতুযান, মিথ্যে নয়— মেঘে-মেঘে প্রতিদিনই দোল

কেবল দেখার গুণে : শ্রী, যে-গান রাতের, হিন্দোল…

তথাপি তামাশা

তথাপি তামাশা, এই একুশের দিনে ? ভাষাহারা

একটি সকাল যেন কানের পাশাতে ডগমগ !

মৃদু হেসে ভোলাতে চেয়েছি আর অবিমৃশ্য তারা

আমার মাথার ‘পরে রেখে গেল সুবিশাল খগ ৷

পলাশে মেলাতে পারি আত্মদাহ — যত বনিবনা…

এতটা মধুর নয় কেকা জেনে, তুমি সেই ‘উঁহু’

সন্দিহানে নিমজ্জিত, ঘরবন্দি, নিঝুম সান্ত্বনা

হৃদয় খোঁজার ছলে কতবার ডেকে যায় ‘কুহু ৷

মুহুর্মুহু ধ্বনি — ওই প্রতিধ্বনি, অফুরন্ত ঋণে

অন্ত্যমিলে লীন হল কোনও এক নতুন লেখায়…

মায়ের ভাষাটি প্রিয়, পাশাটি উজ্জ্বল দিনে-দিনে

এই মতো শান্ত হও, সন্তরণ — কে কাকে শেখায় !

তথাপি তামাশা,ওই ছদ্মবেশ, দূর-চতুরালি —

অক্রূরসাধনে ব্যস্ত ৷ ভাষা, সে যে সুর, বনমালী ৷

মুকুর

এই তো মুকুর, ছায়া, পুকুরের জলে

অবিকল্প শীতলতা — লতাজন্ম ঢের ৷

এখানেও গাছে-গাছে পক্ষীকূল, রাতে

মাছের রুপোলি আঁশে — শতসূর্য জ্বলে ৷

সে-এক দেখার মতো— জগৎব্যাপার…

খ্যাপা চোখে ধরা পড়ে ৷ প্রবেশের দ্বার

সর্বক্ষণ খোলা, গর্ব : সরল বোধের

ওখানে জীবন যেন হাত বেঁধে হাতে

কবিতার জলছবি— রং-তুলি, ঢেউ…

বাউলের একতারা, আদিগন্ত মাঠ

শস্যকণা-কল্পনায় মজে আছে কেউ

ঘাটের রানায় জমে শ্যাওলার পাঠ ৷

পুকুরের জল, ওই তরঙ্গিত শোভা

মুকুর দেখছে খুকু : কবিতা অবাক

——————————————————————–

কবি পরিচিতি

 মনোতোষ আচার্য

পরিচিতিঃ জন্ম ১০ মে, ১৯৭৬ পূর্ব-মেদিনীপুর জেলার এগরা মহকুমার প্রত্যন্ত গ্রামে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। পেশা- শিক্ষকতা। প্রথম কবিতার বই ‘হিমকন্যা ও শরীর শিকারি (২০০৪)। উল্লেখযোগ্য কবিতার বই ‘বাউণ্ডুলের আত্মরতি’, ‘জোনাকিগ্রাম’, ‘একতারার পাঠশালা’, ‘গোধূলি প্রাচীন আলো’। সম্পাদিত কবিতাপত্র ‘প্রদীপ্ত চন্দ্রবিন্দু’।

ভূমিস্পর্শমুদ্রা

এক.

মনে করো খেয়ালি নূপুর বেজেছিল আর্দ্র বাতাসে

আলো ডোবা পরকীয়া মাস লুকোচুরি তোমার উঠোনে

মনে করো স্কুল ফেরা হাঁটা পায়ে পায়ে আদর জড়ানো

বিকেলের চায়ের দোকান, মোড়ের মাথার মিষ্টিঘর

ভাটিয়ালি সুরের জাদুতে জেগে আছে সুবিশাল চর

আঙুলে আঙুলে ছায়া ঋণ অন্তহীন সম্বিৎ সাগর

পরজন্মে ফুটে উঠি মৃত্যুজয়ী বাগানের ফুলে

বৃষ্টি উৎসব যেন মঙ্গলসূত্রে আঁকা স্মৃতি

কাটতে চায় না আজো ঘোর…এ জীবন মায়াবী বিস্ময়।

দুই.

স্বপ্নস্বরূপিনী দেশ বুনে দিচ্ছে শিরায় শিরায় লাস্য অভিসার

মুক্তক ছন্দের মতো তটিনী প্রবাহ আর ধুলোট মানুষ

অলৌকিক জাদুকাঠি ইচ্ছে পূরণের স্বপ্নে ভাষণ বিলাস

পুরোনো গানের সুরে আলপথ, ভাঙামঠ কিছু চেনা যায়

প্রবচনে সুরক্ষিত স্তবগান, পুষ্পবৃষ্টি, চারিত্রিক লিপি

রৌদ্ররসে কীর্তি গাথা দগ্ধ দিন, পরিযায়ী রাতের জঠর

দৃশ্য থেকে দৃশ্যপট জন্ম পরম্পরা মাগধী অপভ্রংশে তোমার লিখন।

বিকেলের রামধনু সাঁঝের জোনাকি… প্রজ্ঞা ও নীরবতা মানসিক স্থিতি

বিরোধী ঝাণ্ডায় ওড়া বুভুক্ষু পাঁচালি

এসো তবে মায়ামৃগ আলোক ইশারা খুঁজে মরি!

তিন.

রঙিন স্কার্ট পরা পাখিদের মহলায়

তুমি কি গাইবে না আধটা গান

একটু দম নাও

গলাটা সারিয়ে মিটিয়ে নাও না মান-অভিমান।

মাটি ও ভিজবে ক’ফোঁটা বৃষ্টিতে

আহা কী জমকালো সাজ-পোশাক

মুখোশে মুখ খুঁজি আমিও বুদ্ধু

তালিতে ভেসে যাই, গালিতে চুপ

অয়দিপাউসের দাও না ক্যাচটা

নান্দী জমে ক্ষীর, তোড়ি ও তানপুরা

নূপুরে বেজে ওঠে অধিকারী…

চার

ভাঙা প্রতিশ্রুতি ও কানা অবজ্ঞার হাওয়ায়

ভেসে চলা ছেঁড়া ঠোঙাটির মতো জীবন যাপন

চোখের আড়ালে থাকে ঢঙ্… সুখ স্বপ্নে চোখ বুজে

নতুন ভাস্কর্য খুঁজে দেবী প্রতিমায়

আগুনপাখির গল্প আর তোলপাড় করে আনি সারাটা পৃথিবী।

শীতার্ত সরীসৃপ হাই তোলে শিকড় বাকড়ে, স্পর্শ করি প্রাগার্য নির্মাণ

আত্মখনন শেষে চেয়ে দেখি রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে

আদিভূতার থানে মানতের ঘোড়াগুলি।

পাঁচ.

রোজকার হুটোপাটি অক্ষর দলন শেষে আত্মচরিতে আঁকি নীল অভিমান

মৃত্যুর মিছিলে ভাসে নিরুদ্দেশ পথ তবুও বাতাসে ভাসে শান্তির ব্রতকথা

স্নান-স্নিগ্ধ সন্ন্যাসিনী প্রসারিত দৃষ্টি দিয়ে শোনাতেন অনন্তের গান

কর্মযোগ পাঠ সেরে নিষিদ্ধ আলোর ইশারায় খুলে যায় মহানন্দা স্রোত…

হৃদয়ের ঝোরা বেয়ে নেমে আসা ঘূর্ণির উচ্ছ্বাস দেখি প্রায়ান্ধকারে

কথাটুকু উবে যায়, রয়ে যায় অনিবার্য সম্পর্কের ছাঁচ

বিফল আত্মার ধ্বনি মিশে যায় কান্নার শরীরে…

——————————————————————–

কবি পরিচিতি–

ঝিলম ত্রিবেদী

জন্ম ১৯৮৪ সালের পৌষমাসে। “দর্শন” নিয়ে পড়াশোনা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখায় প্রবেশ বেশ পরে, ২৭/২৮ বছর বয়সে।

অনুভূতির গভীরে তাঁর লেখার শিকড়। তাঁর কবিতার প্রতিটি চরণ আমাদের সকলকে আয়নার সামনে দাঁড় করায়। বিষয় বৈচিত্রে, ভাষার প্রয়োগে, শব্দের ব্যবহারে ঋদ্ধ তাঁর লেখা পাঠ করা, এক অনন্য অভিজ্ঞতা। তাঁর লেখনী একাধারে যেমন চাবুকের মত উদ্ধত, তেমনই আবার ভালোবাসার মত কোমল। কবিতার পাশাপাশি চলছে গদ্য ও নাটক লেখা-ও।

২০১৫ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ “নিরুদ্দেশ সম্পর্কিত ঘোষণা”-র প্রকাশ। ২০২০-র বইমেলায় দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ “বৃষ্টি পড়া বাড়ি” প্রকাশিত হয়, প্রতিভাস প্রকাশনা থেকে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে চলেছেন। “দেশ” অনলাইন পত্রিকায় “নির্বাচিত কবি”-র সম্মান প্রাপ্তি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে, আমন্ত্রিত কবি হিসেবে, ৪র্থ বাংলা কবিতা উৎসবে অংশগ্রহণ।

লিখতেই হয় তাঁকে ঈশ্বরের অদৃশ্য নির্দেশের মত।

লিখে যাবেন, যতদিন তিনি লিখতে বলবেন।

একলেয়ার্স

তাদের সদ্য কেনা বিকেলের একতলায়

মা ঘুমচ্ছিলেন

বুকের উপর চৈতন্য

সে পাশের ঘরে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়েছিল

শুনল

ডাক

সে ডাকল তার নাম ধরে-

ছাদে উঠে গেল নূপুরেরা

ছাদ…..

সেই দূর দারোয়ান কাকার ভজন

একফালি লোডশেডিং

ছায়া ঘিরে আসা শরীরে

সে আর সে

তারা-

কতক্ষণ চুপ করে ঠায়

কাজল মেশানো জল টলটল করে এ পাড়ায়

আজ রাতে ভিজে আসি চল

দুপুরের শীতজ্বরে পুড়ে গেলে সমূহ আগুন

তোকে বলি-

একটা টফিও আমি খাইনি কখনও কোনদিন

বিশ্বাস কর-

জমিয়ে রেখেছি সব কবরে ছড়িয়ে দেব বলে!

প্রমোদশহর

প্রকৌশলে আছে স্তব্ধ শহর

একমুখী বৈদুর্য-শহর সাজানোর ব্যস্ত কারিকুরি

হাওয়ায় দুঃখ লাগে তোমার

চাঁদেও দুঃখ পাও

বিগতযৌবনা?

তোমার

মস্তিষ্ক থেকে শুরু করি

সংবিধান-স্বীকৃত মুখমণ্ডলে

জ্যোৎস্নার বিরল কাটাকুটি-

সারাতে তাপ নাও, নিদ্রা নাও প্রবীণ ত্বকে

তরুণ

করুণ

মোলায়ম লোমকূপে

সন্ধ্যা ঘনায় আশ্চর্য মনীষায়……

হে শহর

প্রতি রাতে

তোমার পা-দানিতে

উল্লাসের তীব্র সংগীত শোনায় কেউ

তোমার দুরন্ত শারীরিক ঢেউ

গোটা পৃথিবীকে

অ্যামিউজ়মেন্ট পার্ক করে তোলে!

সমাজবিরোধী

কেন তুমি বিরোধিতা করবে সমাজের?

তুমি তো পলাশ তুমি মন্দার—

কেন তবে বিরোধিতা করবে আমাদের— বলো, বলো কেন?

এ সকাল তোমার আমার

এ রাত্রি বেঁচে থাকবার

এসো হাত ধরো

সানি লিওনিকে গিয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে বলো—

“ঐ স্তন তুমি বিক্রি ক’রো না… শোনো মেয়ে—

মাতৃরূপেণ ঐ দুধের দু’ফোঁটা তুমি ঢেলে দাও

হাড় বের করা গোটা পৃথিবীর বিরাট হাঁ-মুখে

মা তুমি…

মুছে দাও সন্তানের সমস্ত ক্ষত

সমাজের পক্ষে দাঁড়াও!

সমাজবিরোধী তুমি নও; আহা তুমি নও– সবাই জানুক!”

গুণ্ডারা শুনে যাও—

তোমার দু’হাতে যত তলোয়ার, 47, বোমারু হিংসা রয়েছে

এসো সব জড়ো করে তুলি

যে কৃষক

নিজের ক্ষেতের মাটি চিবিয়ে চিবিয়ে, মরছে একটু একটু

তার মাটি চাষ ক’রে ফসলের সুগন্ধ তার ও পাঁজর ভ’রে দাও…

ধানের গন্ধ রোজ দুয়ে দুয়ে চাষি যেন বেঁচে ওঠে

নতুন ভোরের সন্ধানে….

এসো

পাষণ্ড নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে দাঁড়াই—

সমাজের বিরুদ্ধে নয়!

তুমিই সমাজ

তুমি ভারতের পতাকার রং

কারোর পক্ষে নয়

আজ শুধু নিজেদের পক্ষে দাঁড়াও

নিজের মনের কাছে নত হও…

কে বলেছে সমাজবিরোধী?

সকলে দেখুক

আজ শুধু ‘সমাজের’ পক্ষে আছ তুমি…

——————————————————————

কবি পরিচিতি

বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়

জন্ম ৬ জানুয়ারি, ১৯৭২ পুরুলিয়া। বাবা সুপরিচিত কবি মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায় মা গীতা গঙ্গোপাধ্যায় । ছোটবেলা থেকে লেখালেখি শুরু। সাহিত্যের প্রায় সমস্ত শাখাতেই তাঁর স্বচ্ছন্দ যাতায়াত । লেখেন কবিতা ছড়া গল্প প্রবন্ধ ও উপন্যাস। অনুবাদ সাহিত্যেও বেশ কিছু কাজ করেছেন। অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্ত কবিতার কাগজ কেতকী পত্রিকা সম্পাদনার সাথে সংযুক্ত রয়েছেন।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত গণিতে স্নাতকোত্তর। পেশায় দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনে Asstt. Controller পদে কর্মরত।

প্রকাশিত গ্রন্থ

কবিতা

১ সুসংবাদ কিনতে যাব

২ হাইফেন বসানো বারান্দা

৩ বিভ্রম রঙের মেঘ

৪ আঁধারে অঘ্রাণে

৫ অপেক্ষা খরচ করি

৬ দূরত্বের প্রতিধ্বনি

৭ নিরুত্তর প্রশ্নের দ্রাঘিমা

গল্প

১ প্রান্তিক জানালা ও অন্যান্য গল্প

২ ….. এবং অস্পৃশ্য হাত

উপন্যাস

১ আক্রান্ত বৃষ্টিদিন

২ নির্জনের আলোবাড়ি ( প্রকাশিতব্য)

৩ মাটির মহক ( প্রকাশিতব্য )

শিশুসাহিত্য

রাঙা মাথায় চিরুনি ( ছড়া)

পুরস্কার

ত্রিবৃত্ত পুরস্কার

মালীবুড়ো স্মারক সম্মান

মন্দাক্রান্তা পুরস্কার

পূর্বাশা এখন পুরস্কার

কফিহাউস পুরস্কার

জিরাফ পুরস্কার

বর্ষসেরা সাহিত্যসম্মান (খড়গপুর মহকুমা তথ্য সংস্কৃতি বিভাগ)

নবপ্রভাত রজতজয়ন্তী পুরস্কার

উন্মেষ পুরস্কার

অণুপত্রী পুরস্কার ইত্যাদি

মেঘের আঁচল থেকে

এক

কালো দাগ মুছে ফেলা গোপন অসুখ

মীমাংসাবিহীন তুমি শুয়ে আছো আজ

ক্যালেন্ডারে ঝরাপাতা,

উড়ন্ত আঁচল দিয়ে ঘেরা এক নির্মম বুননে

জলশাঁখ বেজে ওঠে বুকের কার্নিশে

শব্দ ছিটকে যায় ফুঁ য়ে

ব্যথার অপ্রেম স্পর্শ শরীরের ভাঁজে বিষ

নীলকণ্ঠ সহিষ্ণুতা বোবাজলে ডুবেছে আবুক

চলে যাচ্ছে অগভীর

সদুত্তর প্রশ্নের দ্রাঘিমা

অপরাহ্ণে দলছুট আলো

দুই

মাঠ বলতে সবুজের সমারোহ

টুকরো টুকরো আলো এসে

তার গায়ে নির্জন স্বাক্ষর রেখে যায়,

তখন কারুকাজ করা মনখারাপ ছিটকে যায় দূরে

ঐ নদীর কিনারে

বৃষ্টির জানলা খুলে কেউ এলো

তার হাতে বন্ধুত্ব স্মারক

বিদ্যুৎলতার মতো এক ঝলক ক্ষনজীবি সুখ

বারণরেখা

চারপাশে এ আমির আলিঙ্গন

টপকে যেতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ আয়োজন

ফিরে আসে ব্যক্তিগত জ্বর

স্বপ্ন ধার দাও তুমি সরোবর ,

বলে হাত পাতি যে তুমুল জলের বিভ্রমে

সে ও কোনো আমি , আমিই তো ,

উগরে দেয় আমার মতন এক প্রতিবিম্ব

অবিকল আমার মায়াবী ক্লোন

চৌকাঠে বারণরেখা অতিক্রমহীন ।

ঈশ্বরদা

কান্না পেলে চোখ মুছে হাসি হাসি জানলা খুলে রাখি

ঈশ্বরদা আসবেন

আজ তার নিজস্ব শব্দে বর্ণপরিচয়ের উপর আঙুলের ছায়া দোলে

অ এ অন্ন

আ এ আকাশ

ভাঙা জানালায় আলো টাঙিয়ে দেয় কেউ

চোখের জলে অক্ষরগুলো ফুল হয়ে ফোটে

ঈশ্বরদা আমার প্রতিবেশী

অক্ষরের গায়ে পেনসিল বুলিয়ে আমি ভালোবাসা লিখি ।

—————————————————————–

কবি পরিচিতি:

রাজীব মৌলিক

গ্রাম্য পরিবেশে বেড়ে ওঠা। এযাবৎ প্রকাশিত বই একটি”মেখলা ক্যাকোফোনি”২০১৯,প্ল্যাটফর্ম প্রকাশনী।কৃত্তিবাস, মাসিক কৃত্তিবাস, বৈঠকী আড্ডা সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখেছেন।

চুম্বন

চুম্বনের কোনো যতিচিহ্ন থাকেনা

দু’একটি বেদনাগ্রন্থির ফুল ফুটে থাকে

দু’একটি মৃতপ্রায় লবণাম্বু জন্মে স্মৃতির কোরকে

এ দিন, দিন নয়

যেখানে অফুরন্ত হাসি নেই

নির্জনতার মাঝে ধবধবে মুখ নেই

বিচ্ছেদের অলঙ্কার পরে যে মেয়েটি দাঁড়িয়ে

ওর ডাকনামে মিশে আছে সূর্য ফাঁটা ঘ্রাণ

তবু হেসে কথা বলে-

নারীরা সবদিন হেসে কথায় পটু

হয়তো হেসে কথায় প্রমাণ করতে চায়

তার ঠোঁটে কোনো চুম্বন লেগে নেই

জল

বেদনা আঙুর ফলের মতো রসালো

যত চেপে ধরি জিভ দিয়ে

চোয়াল ফেটে বেরিয়ে আসে জল

সে জলে সাঁতার কাটে এক সাদা ওড়না

সে জলে ডুবে যায় তপ্ত উঠোনের রেশ

এমন হয় ; দুঃখের খইয়ে মাঠ ভরে এলে

বাতাবিলেবুর মতো স্বাদ যার

তাকে মনে হয় বিষণ্ণ দুপুরের ছাদ

এই ছাদ ডিঙিয়ে একদিন তুলে এনেছিলাম

বারোমাসের মেঘ

যার ছায়ায় ছায়ায় লেগে আছে আজ

আমারই জল

 খুনী

একটি পিঁপড়েকে হত্যা করলে খুনী হবেনা

একটি মাছিকে হত্যা করলেও খুনী হবেনা

অথচ একটি ভালোবাসাকে হত্যা করলে খুনী হবে

একটি মনকে হত্যা করলে খুনী হবে

সে পিঁপড়ে হোক

আর বন্য শূকর কিংবা মানুষ

যার হৃদয় আছে

তাকে হত্যা করলেই তুমি খুনী

——————————————————————

কবি পরিচিতি

তিতাস বন্দ্যোপাধ্যায়

জন্ম- ১/০৯/১৯৯৬। গত বছর প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হয়েছেন। ২০১৫ থেকে সক্রিয়ভাবে লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের নানা ছোটোপত্রিকায় লেখালেখি করেন। ২০১৮ তে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রথম বই ‘ঘুম দাও ঈশ্বর’, পেয়েছেন ‘সোনাঝুরি কবি সম্মান-২০১৯

কিংবা আহুতি

খানিকটা নরম অসুখ মাটিতে ছড়িয়ে যাচ্ছে!

তুলে নিতে গেলেই দেখি,

শরতের শিশির।

যে রাস্তায় সহজে হাঁটে না কেউ

সেই রাস্তার পাশে

প্রথম প্রেমিকার চোখের মতো ফুল ফুটে আছে…

শান্তি ডুবে যাচ্ছে জলে।

সাঁতার কাটতে গিয়ে দেখি,

হারিয়ে যাওয়া মাছ!

অথচ সুখ এই যে,

মাছ এবং চোখ

কাউকেই দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখতে পারবো না…

একটি আবিষ্কারের কাহিনী

ফেরার কথা ছিলোনা, অথচ সেদিন সকালেও কাচে জলের ফোঁটা ফেলে দেখেছে কীভাবে সূত্র কাজ করে। বিক্ষিপ্ত আলো খেলনাপাতি খেলতে গিয়েছিল পাশের বাড়ি, ডেকে এনেছে তাকেও!

এখন ছককাটা বারান্দায় রক্ত আর বুগেনভিলিয়ার রঙ এক হয়ে গেলেই সে নিশ্চিত হবে, অতি প্রেমিক এবং এস্রাজ একই মুদ্রার দুই পিঠ।

গাঢ়

 একটা শুকনো সেতার ক্রমাগত বেজে চলেছে কানের পাশে।

চোখের বাইরে কীসের ছায়া পড়ে,

পাখি বলে ভুল হয়, পুনরায় সামলে উঠি!

এই বুঝি গোপন হাত যা ধরবার জন্য এত তাড়াহুড়ো!

নক্ষত্র জানে না আকাশ কখন তার দিকে আঙুল তুলে বলবে – ‘কে তুমি? এখুনি ছেড়ে দাও ঘর…’

একটা শুকনো আলাপ, বুকে কাছে খসখস শব্দে ঘোরাফেরা করছে!

বাইরে বৃষ্টি আর বৃষ্টিতে উচ্ছ্বসিত পাতাদের দলে নাম লিখিয়েছে পুরনো শোক!

ওমন গাঢ় সবুজ শোক এর আগে দেখিনি নিশ্চিত…

——————————————————————

কবি পরিচিতি

তুষারকান্তি রায়

আজ বাংলা সাহিত্যের একটি নিয়মিত নাম তুষারকান্তি রায়। কৈশোরে ‘ আরশি ‘ পত্রিকায় লিখে কবিতার জগতে এসেছেন। দেশ, কবিতা প্রতিমাসে, এই সময়, কবি সম্মেলন,  শহর,  কৃত্তিবাস,  নতুন কৃত্তিবাস, আজকের সম্পূর্ণা, সহ বাংলার বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে লিখে তিনি সাহিত্য চর্চার মূল স্রোতে যুক্ত রয়েছেন। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কবিতার বইগুলি হলো =  সৃজন তুমি লিখতে পারো না তো (  প্রতিভাস ) ,  আলাপী শিশির ( প্রতিভাস ),  বাউলের বারোকথা ( সিগনেট প্রেস ), অকাল কিশোর ( পাঠক ),  সন্ধ্যা তারার গন্ধ ( সপ্তর্ষি ) , কিউমুলোনিম্বাস ( সুতরাং ),শোনো রাধারানি ( অভিযান পাবলিশার্স ),  অন্যরোদ ( প্ল্যাটফর্ম )।

      প্রকাশিত উপন্যাস =  দাহপুরুষ (  অভিযান পাবলিশার্স),   তীর্থংকর মল্লিনাথ (  অভিযান পাবলিশার্স )

অনর্থ

ধরো আঘাতেও বাজলো না সপ্তসুর;

প্রাসঙ্গিক শব্দের খানা খন্দে

নাছোড় রাশিফল , জল , বয়স !

স্তব্ধ সন্ধ্যার মুহূর্ত ।

জনতা এক্সপ্রেস ?

সে তো দেরি করেই আসে ; তবু দ্যাখো

তাঁর পাঁজর ভর্তি যুবমেঘের হুল্লোড় ,

ডানা খোলা শ্রাবণ সংক্রান্তির গমগম কথোপকথন ;

ওরা কী ইউক্লিডের উপপাদ্য জানে ?

মহুয়া ফুলের গন্ধ ?

আমি দশকথার হাওয়াগাড়ি চালাই,

বাঁকের পর বাঁক পেরিয়েও বাঁকের নেশা যায়না !

বনগন্ধে ভরা ঢুলুঢুলু অর্গান বিধুর এই মন !

তর্ক কোরো সোনামন ! এসো

আসন্ন মল্লারের পাঠ্য বিষয়ক উপাখ্যান প্রস্তুত করি ,

গূঢ় বার্তার স্বর – ব্যঞ্জনে লিখে রাখি

অনর্থ , কথাপুরের মাজাকি , ভাঙচুর , আর

শৃঙ্খলাহীনের সংহিতা , দ্যাখো

আকাশে বিষবৃক্ষের চাঁদ

দুরত্ব

বসন্ত চলে গেছে , এখন 

রুখু বাতাস প্রসঙ্গে কথা বলবার সময় ।

শুভেছা ! জানো তো , সকল 

লেখার মধ্যেই কত কাটাকুটি থাকে !

যেমন চাঁদের কপালে রাহু , তথাপি 

প্রশস্তি শোনাতে গিয়ে কত মুদ্রা, আর

 কথার বিদ্যুৎ

 আমি হারিয়ে ফেলেছি 

মেঘে ও আষাঢ়ে –

যদি অনুমতি দাও , পুনশ্চ লিখি 

          মুদ্রা

শেষ পঙক্তির পরেও 

যতিচিন্হের সংকেত শ্বাস – প্রশ্বাস । বাঁশি 

অথচ দ্যাখো , হর্ষ লেখার 

বর্ণ সরে গেলে অক্ষরে অক্ষরে 

আছড়ে পড়ে বেখুদি , আমি 

সার্কাসে ভালুক নাচের মুদ্রা 

নিয়ে খেলতে খেলতে 

ছড়িয়ে পড়ি জলের নিয়মে 

নতুন কাগজে । 

——————————————————————–

কবি পরিচিতি:  

কবি বিকাশ চন্দ

জন্ম ১লা এপ্রিল ১৯৫৫

জন্মস্থান, খেজুরী থানা, কামারদা। 

এখন “মানসভূমি”, কাঁথি, কুমারপুর, পূর্ব মেদিনীপুর। সূচক ৭২১৪০১, মোবাইল ৯৪৭৪৫৯৯৭৭৪ 

পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত। ভারত। 

প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ  ঃ—-

১. বীজে অঙ্কুরে বিনষ্ট শিকড়ে (২০০৭) ২.বর্ণ বিহীন বর্ণ বিকাশ (২০১৬)

৩. ঋতু বদলের ছবি (২০১৭)  ৪. আকাশ গঙ্গায় নক্ষত্র ভেলা (২০১৭)

৫. বিষণ্ণ দ্রোহকাল (২০১৮) ৬.শূন্য শরীরে স্থপতির হাত (২০১৮)

৭. সাদা ফুলের কফিন(২০২০) ৮. অনুচ্চারিত শব্দের কোলাহল( লকডাউনে আটকে আছে)

এসো বকুল সই 

~~~~~~~~~

চিরকাল জেনেছি মৃত্যুর অবয়ব বন্ধ চোখ

কোনও বিকার মারাত্মক কোন অশনি সংকেত নেই, 

হৃদয়ের ভেতরে চুপচাপ ঘুমিয়েছে স্পন্দন—

নিম গাছ তুলসী শূন্য তক্তাপোশ ঝিমুচ্ছে দোর্দণ্ডপ্রতাপ

প্রতিবাদের রঙ ছিল না তবুও রাজা পাতাল ঘরে—-

এই শূন্যতা কী রঙ চিনেছিল হে মহাত্মন ! 

যেখানে যত বকুল গাছ সেখানে বসন্ত বারো মাস

কোকিল কোকিলার ডাক আবহমান—

যে মানুষটা চিরকালের জন্য ঘুমোল

তার পঞ্চইন্দ্রিয় নিঃশব্দ সেও শুনেছিল, 

চির বসন্ত সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাত্রি—

সে মানুষটা বকুল চাতালে বসেছিল পুষ্প বৃষ্টির জন্য। 

বকুল গাছ সইতে পারে না বিরহ বেদনা—

বর্ষায় সারা শরীর ভিজেছে মন্দাকিনী জলছবি, 

সমস্ত মানুষের আড়ালে চুপিচুপি বসে আছে

তোমার চির প্রিয়তম সেই অবয়ব প্রসন্ন মুখ। 

এই মাত্র ঝলসে গেছে তারই সঞ্জাত বংশ গৌরব—

তা হলে এসো বকুল সই প্রতিদিন এক সাথে হবিষ্যি খাই। 

হৃদয়ে আগুন জ্বালো

~~~~~~~~~~~~~

অনেক দিন হয়ে গেল বসতি পঞ্চাশ বছর

এক একটি জামার ভেতর অনাবৃত শরীর—-

মাটির ঘর তুলসী উঠোন হা-অন্ন নিত্য সহচর

দীর্ঘ সম্পর্ক শুরুর সময় একই স্বপ্নের গভীর। 

তেমন ভাষা যুৎসই ছিল না ছিল শুধু চুম্বন 

তবুও তো প্রেমময় স্বামী সন্তান কখনো দীর্ঘশ্বাস, 

গাছের গহনে ভূমি কন্যা ভ্রমর আদরে ঘুম বন 

মুখ ছবি ছিল জঠর জাতক জানে নিশ্চিন্ত আবাস। 

এখন আবার বুকের ভেতরে চাপ  কেন অন্য আভরণ —

মধুকুঞ্জ কী কেবলই অরণ্য বিলাস রাধিকার, 

কত বার শোকের চিহ্ন ভিজিয়েছে যত গোপন আস্তরন

এখনো ফুল পাখি শস্য মাঠ সবুজ জানায় স্বাধিকার। 

মাটির মোহে স্বর্গ বুনেছি সকল গেরস্ত ঘরের আলো—

কোন কথা নেই তবুও শুনেছি হৃদয়ে আগুন জ্বালো। 

কবিতার শব্দেরাও কাঁদে

~~~~~~~~~~~~~~

যা বলেছিলাম ঠিক তাই এখন কেবল স্তব্ধতা —

এখনও সাজানো আছে খড়্গটা চন্দ্রবিন্দু আঁকা, 

বলি কাঠে শ্যাওলা জমেছে সবুজ—

বহুকাল একান্তে রক্ত মেখেছে অদৃষ্ট লিপি। 

এখন আকাল রক্তের প্লাজমা বভাজনে—

যারা লাল ভালো বাসে না তারাও জানে 

রক্তের রঙ কেবল রক্তের মতো, 

কোনোটা হিম আর কোনোটাতে উষ্ণতা মাখা

একই মা গাছে জড়িয়ে অভিন্ন শাখা প্রশাখা। 

কবর খুঁড়ে মানুষ ঘুমালেও কান্না আত্মজনের—

হবিষ্যি কালে শূন্য চিতায় আঁকা মানুষ পুতুল, 

নিঃশব্দে একেকটা বাঁধন আপনি ছেঁড়ে

জীবনের স্বাদ খুঁজতে চাইলে ছিঁড়ে যায় নাড়ি। 

চৌকোনা সাদা কাপড় আর সরষে ফুল—

আবার আবাদী জমিনে ঘুমোয় অনাবাদী শরীর। 

ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাক খায় ঢেকে রাখে বাড়ি

কবিতার শব্দেরাও কাঁদে  বেহালার তারে।

——————————————————————–

কবি পরিচিতি

সৌমাল্য গরাই

জন্ম ১ লা জুলাই, ১৯৯৬।

বাঁকুড়া জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম, নাকাইজুড়ি। সেখানেই তার জন্ম, সেখানেই শিক্ষার সাথে বেড়ে ওঠা। বাঁকুড়া ক্রিশ্চান কলেজ হয়ে বর্তমানে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ে স্নাতকোত্তরে পাঠরত। কবিতাই তার নিভৃত আশ্রয়, বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কবি লিখে চলেছেন। তার মধ্যে অন্যতম দেশ, কবিতা আশ্রম,কৃত্তিবাস, শ্রীময়ী, লালমাটি, রুখুডি ইত্যাদি।

নিখোঁজ

অন্তর্বতী স্নায়ুযামে

কিছু ঋতু স্থির হয়ে বসে

প্রখর গ্রীষ্মের মধ্যে   পোড়ে আত্মকামী

কখনো বৃষ্টিতে খুঁজে পায় না নিজেকে মেলে ধরবার ছাতা

হেমন্তের মতো লুকায় জীবন 

মর্মব্যথাকাল

যে চলে গিয়েছে এক অজানা ঋতুতে

তারও গহীন লোক হারিয়েছে 

নিখোঁজ মানুষ জানে না আসলে, 

পুষে রাখে  রাত 

ঋতুচক্রহীন পথে

শেষে নিজেকেই খুঁজে পায় না হঠাৎ 

শান্তি সংহিতা

যতক্ষণ আঁকড়ে থাকো আঙুলভর্তি আলো। বিষণ্ণ জাহাজ থেমে গেলে হাওয়া চুপ হয়। বাগান হয়ে ওঠে কলকাতা। চড়ুই রোদ্দুর থেকে নরম পাখিটি গালে এসে বসে, বাসা বানায় তোমার চুলে।

দিকচিহ্ন হারায় নবীন সারেং। সময় অপরাধী হয়ে যায় এসময়। এমন স্তব্ধতা থাক যেন মুছে যায় হাতঘড়ি। অদৃশ্য চুম্বন ভেঙে তৈরী হোক আয়না পৃথিবী—যেন প্রতি জন্মান্তরে তুমি এক  তারাবিম্ব। মহাশূন্যে বিস্মৃত সময়ের অসীম চোখ নিয়ে চেয়ে আছো—বুদ্ধের শান্তির মতন.. 

২.

তৃতীয় নয়ন থেকে এসেছ—নিদ্রা গেলে যে চোখ স্বপ্নকে দ্যাখে। আমি স্থির পরিব্রাজক—শান্ত দুই হাতে

মুঠো আগলে রাখি। প্রস্থান ফিরে আসে

পরিচর্যা পেলে রোগও ওষুধ হয়ে ওঠে। গ্রহদোষ কেটে যায় পৃথিবীর। নিঃশব্দে জানাই 

ভাষার হরিণী, নিঃশ্বাস বাঁচিয়ে রেখো—  আমি তো সামান্য ব্যঞ্জনবর্ণ, তোমার স্বর ছাড়া উচ্চারিত হতেই পারি না

বাস

নতুন মানুষ তুমি উঠে এসো ধীরে

পথবহনের দায়, কোলাহল বুকে নিয়ে শুয়েছে ডাঙার মাঝি

  জীবন্ত গৃহটি যেন ছুটে চলেছে দুর্বার

 যতক্ষণ ভার, নিবিড় আনন্দে ভারী হয় বুকের কষ্টটি

তুমি, নেমে গেলে ব্যথা…

গন্তব্য নিকটে এলে তাই

গোঙানির শব্দে কান পেতে রাখা দায়

——————————————————————–

কবি পরিচিতি

সোহম চক্রবর্তী

ঠিকানা – কৃষ্ণনগর, নদীয়া

বয়স – ২২ বছর

পেশা – স্নাতকোত্তরের ছাত্র

কাব্যগ্রন্থ – নির্জনতাগুচ্ছ (২০১৯), আদম প্রকাশনা

লেখা প্রকাশ – মুদ্রা, জীবনকুচি, আলোপৃথিবী, তবুও প্রয়াস, কথাকৃতি, আনন্দম্ সহ বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে

পা-ফসকানো টিকটিকিটা

পা-ফসকানো টিকটিকিটা ফ্যানের ব্লেডে ধাক্কা খেয়ে

ছিটকে পড়ে – এই দেখে সব নাগরদোলায় ভয় পেয়েছি,

অমনি যদি… অমনি যদি চুলচেরা বুক নিয়েও আরও

মিনিটকয়েক শ্বাস নিতে হয়? লোকজন কেউ পাশ কাটিয়ে

দিব্যি চলে, কেউ বা আবার লেজটি ধ’রে দূর ক’রে দেয়…

ঠিক তখনও… ঠিক তখনও তোমার কথাই ভাবতে হবে –

গলার কাছের ধুকপুকে প্রাণ যেইটুকুনি আটকে আছে,

থাকবে না আর একটু পরেই – এই কথাটাই ভাবতে হবে,

কিন্তু তুমি থাকবে ভীষণ ভিতর ভিতর – অথচ নেই…

সমস্যা এই দুইটি আলোর মধ্যিখানে ঠায় দাঁড়িয়ে

নখ খেয়ে যায়… অন্ধকারে আমার ভীষণ কষ্ট লাগে –

একটি জীবন ঘুরিয়ে মারে দুর্বিপাকে, নাগরদোলায়;

আরেকটি স্রেফ শিউরে ওঠে টিকটিকিটা মরার আগে…    

সীমা

তক্ষুনি ঠিক পাথর করে

ঝুলিয়ে রেখে গেলে

ঠোঁটের কাছে নিরীহমতো

ছোট্ট সেমিকোলন…   

সকল গৃহ হারালো যার

আমার ঘুমের ভিতর ছোট্ট একটা ঘর আছে।

একফালি খাটিয়ার পাশের টেবিলে

জল-টল কিছু একটা রাখা…

আমি ঘুমিয়ে পড়লেই কেউ একটা ঢোকে –

খাটিয়ায় শুয়ে থাকে চুপচাপ, ভয়ের স্বপ্নে চমকে উঠে

পাশের টেবিল থেকে জল গড়িয়ে নেয়;

ভোর-ভোর বেরিয়ে যাওয়ার তাড়ায়

দরজা দেয় এতজোর – যে সেই শব্দেই আমার ঘুম ভাঙে,

চেয়ে দেখি পাখি ডাকছে, জানলায় জানলায়

উপচে পড়ছে রোদ…

অর্থাৎ, আমার জন্যে লোকটি আজও বাস্তুহারা হ’ল।

——————————————————————–

কবি পরিচিতি:

অভিনন্দন মুখোপাধ্যায়

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ – সিলভার লাইনিং (জ্বলদর্চি প্রকাশনা), লাভ ক্যাপুচিনো (যৌথ)( অভিযান পাবলিশার্স), এ জীবন ক্রিকেট-লিখিত ( হাওয়াকল প্রকাশনা), পর্ণগ্রাফিত্তি ( প্ল্যাটফর্ম প্রকাশনা)

সম্মান / পুরস্কার – তারাপদ রায় সম্মাননা (নতুন কৃত্তিবাস), বইতরণী সম্মাননা ‘এ জীবন ক্রিকেট -লিখিত’ কাব্যগ্রন্থের জন্য।

ত্রি

১. 

আলোয় ফোটে না যত কিছু, তাকে আমরা

                                       দুঃখ বলে চিনি

তার উপর তা দিই, বসে থাকি ভাঙবার লোভে

কে বসেছে ছক পেতে পুরানো শত্রুতা ঘিরে?

তাকেই প্রণাম করি নিভে যাওয়া কণ্ঠনালি চিরে

২.

হাওয়াটি উঠবে ডেকে – এই তার মুদ্রাদোষ

যদিও জেনেছে লোকে, এ স্বভাব ভাল নয়

কে কখন চলে আসে,  ভূত-প্রেত-পরী কিংবা জিন

মানুষের সমবায়ে হাওয়াটিও অশরীরি 

                          অন্যার্থে মায়াবী, প্রাচীন

৩.

জলকে স্বীকার করো

মানো, এই জলের পরিধি থেকে দূরে

কেউ যেতে পারবে না কোনোদিন

জলকে ভয় পাও

জলের হাতেই দিও অসমাপ্ত ঘটনাপ্রবাহ

কিছু নয়–কিছু নয়

জলের ভেতর আছে সমস্ত নিবিড়ের দাহ

——————————————————————–

কবি পরিচিতি

শুভদীপ সেনশর্মা

প্রথম দশকের তরুণ কবি শুভদীপ সেনশর্মার জন্ম ০৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ কাটোয়ায়। কবিতায় আত্মপ্রকাশ ‘সবাই রাজা’ পত্রিকায় ২০১০ সালে। পরবর্তীতে কবিতা প্রকাশিত হয়েছে দেশ, ভাষানগর, আদম, তিতির, ছাপাখানার গলি, শুধু বিঘে দুই সমান্তরাল ভাবনা, বীরুৎজাতীয় পত্রিকা, ফিনিক্স, কথক, আলোবাতাস সহ দুই বাংলা আরও অনেক লিটল ম্যাগাজিন ও ব্লগজিনে। কবিতা লেখার পাশাপাশি গদ্য ও প্রচ্ছদ-অলংকরণ করে থাকেন। নেশা চুটিয়ে গল্প করা, পুরাতন পত্রিকা সংগ্রহ করা, পুরাতন বই সংগ্রহ করা, বই পড়া, গান শোনা। দশ বছর ধরে সম্পাদনা করে আসছেন আলোপৃথিবী কবিতা পত্রিকা। ‘আলোপৃথিবী প্রকাশনা’ র কর্ণধার এই কবির এযাবৎ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা দুটি – নির্বাক বাল্মীকি (বীরুৎজাতীয়, ২০১০), রজত সেন (বার্ণিক, ২০১৯)।

মা

আমার মন্দিরে যে দেবী থাকেন তাঁর কোনো নাম নেই

সে অলিন্দের গভীরে বিচরণ করেন

কতবার ভেবেছি তাঁকে নাম ধরে ডাকব

কতবার ভেবেছি তাঁর একটা নাম রাখব

আমার মন্দিরে ফুল নেই; প্রসাদ নেই

একমাত্র আমি ছাড়া…

মা’কে দেবীর ছায়ায় আগলে রাখি

যেভাবে মন্দিরে থাকেন দেবী

মাকেই দেবী বলে ডাকি

অশ্রুজাত বালক

এখন এখানে কোনো কবিতা লেখা হচ্ছে না

বিপন্ন সমস্ত মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকে বালক

বালক সব জানে

ধূসর কাঁধে ঝুলে থাকে অন্তর্জলী কবিতার

উদাস পাণ্ডুলিপি

অন্ধ এই রাতের দিকে তাকিয়ে আমাদের বালকের স্বপ্ন

বসন্তের ছায়া আগলে রাখে চন্দ্রাহত কবির শরীর

এখন এখানে কোনো কবিতা লেখা হচ্ছে না

বানান অভিধানের পাতা উল্টে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা

বানান সংশোধন করছে অশ্রুজাতক বালক

বালক সব জানে

হারিয়ে যাওয়া বকুলফুল কুড়োতে কুড়োতে

এক বাংলার জ্যোৎস্না জন্মহাড়ে খুঁজে পায়

উদাসীন প্রেমের কবিতা লিখতে গিয়ে সুন্দর বালক

গোপনে গোপনে কখন একটা দীর্ঘ কবিতা লিখে ফেলে

তোমার কল্পতরু ছায়া

তোমার ছায়ার পাশে কল্পতরু গাছের ওম

অত্যাবশক প্রাণের হৃদকম্পনে ভেসে যাচ্ছে কল্পতরু

তবে এখানে মাটি কোথায়?

গঙ্গাজলে মাটির স্তব থেকে ধূলিকণা উড়ে যায়

পড়ে থাকে অনিঃশেষ শূন্যতা

আমার অন্ধকার ঘরে

বেদনাসিক্ত হাওয়া

মৃতদেহের ছাইয়ে একফোঁটা গঙ্গাজল ফেলে দেয়

আমার শরীর পাশে কল্পতরু জীবন

আমার দেহের ভারে প্রত্যাশিত পৃথিবী

আমার পদতলে প্রক্ষালিত অন্ধকার

আমার আর তোমার হারিয়ে যাওয়া

ধূপের ধোঁয়ার মতো বাস্তব

——————————————————————–

কবি পরিচিতি:

নীলাদ্রি দেব

জন্ম 14 এপ্রিল, 1995. কোচবিহারে (পশ্চিমবঙ্গ).

শারীরবিদ্যায় স্নাতক. যুক্ত আছেন শিক্ষকতায়. 

কবিতাবই- ধুলো ঝাড়ছি LIVE, জেব্রাক্রসিং ও দ্বিতীয় জন্মের কবিতা, এবং নাব্যতা. 

সহ সম্পাদিত পত্রিকা- ইন্দ্রায়ুধ, বিরক্তিকর

রাতের রেওয়াজ বা অমূলক কবিতা 

নয়. 

পশুপতিকে আঁকতে থাকেন অরণ্যদেব 

তীব্র হরিণপোকা শিস দিয়ে যায় 

সাপের মুখে ব্যাঙ ও ব্যাঙাচি 

চাঁদের শেষ আলোয় খাদ্যশৃংখল 

প্রকাণ্ড এক রাতশামিয়ানার নিচে 

  প্রকৃতিকে আঁকতে থাকেন পশুপতি ও অরণ্যদেব

দশ. 

নদীখাত ভেঙে, উল্টে কত জল বয়ে যায় অনির্দিষ্টকাল 

দেহজুড়ে অবিন্যস্ত সুরের সংলাপ 

ঢেউ আর মেঘেদের ছায়া 

      কত বিমূর্ত ছবি তৈরি করে 

থোপা থোপা পানাগাছ বয়ে যায় অজানা জাদুতে

কাছে আসে বৈঠার গান 

নৌকোর দুলে ওঠা মাঝি শুধু বোঝে!

জীবনের পালে মিহিসুতো দৃঢ় করে পার ও জমিন

বারো

বর্ষায় শীতের একটা আমেজ থাকে 

শীতে বর্ষার 

জীবনে কুয়াশার একটা স্পর্শ থাকে 

কুয়াশাতে জীবনের 

আরও অনেক কিছুই এমন জড়িয়ে জড়িয়ে বাঁচে

মানুষ দেখে 

শুধুই দেখে 

এরপর অন্য কিছু দেখার জন্য স্তব্ধ থাকে 

বাহানা খোঁজে 

           অনেক সময় পাতার ছায়ায় 

      নিজের মুখের আদল দেখে আঁতকে ওঠে

————————————————

One thought on “অনলাইন চৌতিশা সাহিত্য পত্রিকার প্রথম পাক্ষিক

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started