চৌতিশা সাহিত্য পত্রিকার ২য় ই-সংখ্যা

 

——————————————————————————————————————————-

কবি পরিচিতি -ঃ       সন্দীপন দাস

 জন্ম-১০ই মে,১৯৯৩

জন্মস্থান-বনগাঁ জীবনরতন ধর মহাকুমা হাসপাতাল

প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়-‘বনলতা’ সাহিত্য পত্রিকায় ক্লাস নাইনে পড়ার সময় ১৪ বছর বয়সে বনগাঁ থেকে।

এখনও পর্যন্ত কোনো কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি।তবে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিতব্য-বনলতা পত্রিকা ও প্রকাশন।

সম্পাদক-‘বিবেকের আলোকে’ সাহিত্যপত্র।

অজস্র পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি চলছে।

প্রিয় কবি-জীবনানন্দ দাশ

ভালোবাসি-পাহাড়, সমুদ্র।

শখ- পুরোনো চিঠি পড়া

ইংরেজি ভাষায় স্নাতকোত্তর। বর্তমানে বি.এড.পাঠরত।

              ফিসপ্লেট

১.

পোর্সেলিন পাত্রে জমানো ঈর্ষা দ্রুত ঠান্ডা হচ্ছে

তুমি না বুঝেই তা ঢেলে দিচ্ছো বাসরুটের ক্ষতজুড়ে…

এভাবেই বুঝি পার হয়ে যাওয়া যায় একটা হায়ারোগ্লিফ…

২.

হেমলক বনে মাঝরাতে কারা যেন ফেলে রেখে গ্যাছে ভ্রুণের মৃত্যু

রক্ত মুছে আবারও আড়ালে বুঝি বড়ো হতে চেয়েছেন এক খ্রিষ্ট

আবলুশ কাঠের টেবিলের পায়া জুড়ে সোহাগী ঘুম নামছে…

৩.

জাদুজানলা থেকে সাতরঙা আলো ঠিকরে এসে পড়েছে তোমার শরীরে

তুমি আগুনের ঠিকানা ভুলে জড়িয়ে ধরেছো আলোর অভিমান, মায়াবী ঈশারা

মনকেমন জাদুকর বৃষ্টি আনতে তখন একটানা বাজিয়ে চলেছেন বিষণ্ণ ম্যান্ডোলিন…

৪.

তুমি আলো নয়, মৃত্যুটুকু নাও

হেমলক বনে ফিরে যাবে ঝাঁক ঝাঁক সমান্তরাল প্রজাপতি…

বারচের শরীর ফুঁড়ে আবারও উঠে আসবে গোপন মন্ত্রের ছল-চাতুরী…

ভুল করে তুমি বুঝে নেবে আমরা সবাই টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরির ফোকস্…

                      ফেরারী

 আর এভাবেই তুমি পার হয়ে যাচ্ছো সমস্ত কাঁটাতার

শহরের ঘুম,মৌর্য সম্রাটের সমস্ত অহংও…

একটা পাখি উড়ে গ্যালো তোমার শরীর ছুঁয়ে

আর রেখে গ্যালো এক অদ্ভুত আলো…

যে আলো ছুঁয়ে একে একে ঘুমিয়ে পড়ছে রাহী, অসহায় অশ্বমেধের ঘোড়া, শূন্যতার অস্থিরতা…

ঘুমিয়ে পড়ছে সন্ধেমণি ফুলের আত্মহত্যা, পর্ণমোচী আঙুলের ফুরিয়ে আসাও…

শুধু জেগে থাকছেন এক মানুষবেশী ঈশ্বর

যিনি নিশ্চিন্তে পায়চারি করে বেড়াচ্ছেন শহরের ঘুম থেকে এত এত আলোর সাম্রাজ্য জুড়ে…

তোমার গায়ের গন্ধ আবারও টুপটাপ ঝরে পড়ছে আমার কবিতায়…

আর এভাবেই তুমি পার হয়ে যাচ্ছো আমায়

আমার ঈর্ষাকে… নির্মিত সব ছল-চাতুরীও…

        দ্য ইউক্যালিপটা   

দূরে দাঁড়িয়ে শুন্যতা, কিছু না পাওয়া…

হাওয়ায় ভাসে সন্ধেমণি ফুল, রঙিন ফিতে

বাঁশি বাজাতে বাজাতে যে মেয়েটি এখন চলে যাচ্ছে

বাঁশবেণীর জঙ্গলে সে জানে শুন্যতার আর এক নাম বেঁচে থাকা

না পাওয়ার আর এক পিঠ হলুদ…

কবি আর কবিতা বমিকে টিকিয়ে রাখার এক অনাবিল প্রয়াস মাত্র…

সন্ধে গাঢ় হয়… আরও গাঢ় হয়…

আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন বোনে আনমনা ইউক্যালিপটাস

পাতা খসে যায় একের পর এক…

একের পর এক…

দূরে দাঁড়িয়ে শুন্যতা, শামুকজন্ম, কিছু অভিমান…

——————————————————————————————————————————-

কবি পরিচিতি -ঃ  অর্ঘ্য দে

 জন্ম ১৯৮৩, বৈশাখ।

নিবাস : চুঁচুড়া, হুগলি।

পেশা: ফিজিওথেরাপি।

লেখালেখির শুরু কলেজজীবন থেকে। কলেজ ম্যাগাজিনে। কবিতাচর্চার শুরু ২০১৪ থেকে। কবিতা ছাড়া ছোটোদের জন্য লিটিল ম্যাগে লিখেছি কিছু ছোটোগল্প।  গিলগামেশ প্রকাশনী থেকে কলকাতা বইমেলা ২০১৯ এ প্রকাশিত হয়  প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি থ্রিলার গল্প সংকলন ‘মৃত্যুর কোড’।২০২০ সালে বর্ধমান লিটিল ম্যাগ মেলায় আলপৃথিবী থেকে প্রকাশিত হয় একফার্মার কাব্যপুস্তিকা – ‘ডিসেম্বরের বাজনা’

হায়াত মিঞার ঋতুযাপন

এক

বৈশাখী ঝড়ের পর

লোডশেডিংয়ের নিকষ সন্ধ্যায়

আসত হায়াত মিঞা, পিঠে ঝোলা

আমরা আলো লুটে নিতাম খুশি মতো।

দুই

বর্ষা এলেই

জলফড়িংয়ের সবুজ মেখে

জলের মতো স্বচ্ছ হয়ে যেত হায়াত মিঞা

ভাসিয়ে দিতাম খেয়াল।

তিন

কখনও কখনও হায়াত মিঞাকে

কাশফুল মনে হয় – কোজাগরী রাতে

হাওয়া মেখে তিরতির কাঁপে,

আমার শরীরে ফোটে আলপনা।  

চার

হায়াত মিঞার এসরাজে

শুনি আজানের সুর,

হেমন্তের ফুরন্ত বিকেলে

হিমেল পাখিরা ফিরে আসে

আমার ঘরের আলোছায়ায়।

পাঁচ

উত্তর-বাতাসে কুঞ্চিত জনপদ ―

হামেশাই ভুলে যায় জীবনের উষ্ণতা

হায়াত মিঞা রুটি স্যে‍ঁকে,

গনগনে আঁচে

ফের আগুনের ব্যবহার শিখি। 

ছয়

বুকে দাউদাউ নিদাঘ,

কাঠকয়লার দেয়ালে

হায়াত মিঞা আঁকে

কৃষ্ণচূড়ার ছবি: বসন্তের সম্মোহন।

———————————————————————

 কবি পরিচিতি-ঃ দেবার্ঘ সেন

    নান্দনিকতা জীবনের প্রতিটি ছত্রে। শিল্পের জন্য যে কোন ত্যাগ শিরোধার্য করে থাকেন। দৈনন্দিন জীবনে লেখক এবং ম্যাথর দুই-ই। শুধু নারী নয়,পুরুষদের মধ্যেও মাতৃত্ব বপন এবং লালন করতে চান। ভীষণ খুঁতখুঁতে, অন্তত শিল্পের ক্ষেত্রে। সহজে সন্তুষ্ট হন না, হয়তো শিল্পেরই তাগিদে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখেন আর মাঝে মাঝে ছক ভাঙা ছবি আঁকেন। এখনও পর্যন্ত এককভাবে চারটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে, যথাক্রমে সমান্তরাল( দিগন্ত প্রকাশন ২০১৮), এক্সকিউজ মি ( বার্তা প্রকাশন, বর্ষা, ২০১৮) কাজল বাঁশী ( বার্তা প্রকাশন, কলকাতা বইমেলা ২০১৮) নির্বীর্যতার জতুগৃহ ( বার্তা প্রকাশন, কলকাতা বইমেলা ২০১৯)

    অবক্ষয়

মৃত হৃদয় নিয়ে অয়সের মতো

শব্দের সিঁড়ি বেয়ে মুক্তির পথ 

ভাসিয়ে দিচ্ছে জীবন গাঙুরের ঘোলায়। 

কান্না শুধু কান্না আলোক স্রোতে 

স্পর্শের অবৈধতায় চন্দ্রগ্রহণ 

ছায়ারা বিদর হলে প্রত্যাশাহীন 

নরম মাটির ওপর, আছড়ে পড়ছে হাত। 

পরপর ঘড়ি সাজিয়ে মৃত্যুগামী

বেষ্টনীর আবদ্ধে তপ্ত শোধন কলা,

যা যাওয়ার তা পারতো ভেসে যেতে। 

নির্জীব হৃদয়ে ছাই রাঙা বায়ু

জৌলুস ছেড়ে যাওয়া বিদগ্ধ ময়ূরী 

বৈতরণীর সামনেই বসে থাকা, 

সজীবতা আর বেঁচে থাকার পার্থক্য যে অনেক

এ তুমি বোঝাবে কাকে!!

নেপথ্যচারী

পাখার তিনটে হাত, 

মানুষের দুটো

হাত দিয়ে মানুষ পাখা লাগায়।

পাখার মাথার শক্তি মানুষের দেহ 

ধরে রাখে,

হত্যা আসলে করে মাধ্যাকর্ষণ। 

অভিকর্ষজ ত্বরণ শূন্য হলে এই 

প্রকার দুঃসংবাদ আসার ছিল না..

      স্থানীয় সংবাদ 

ফেলে রেখে গেছো অকৃত্য যা, অদ্ভূত নীল 

সেসবে এখন আর কোনও দ্বিধা নেই। 

লোহার তফাতে এসে দাঁড়ায়েছে যারা..

সুদীর্ঘকাল শেষে আজও বিপ্লবী মেঘ। 

এই দেখো কালের ধ্বনি রাঙাচ্ছে শান 

ডুব দিতে এলোমেলো নৌকোর খোল 

চেতনার চামড়ায় স্থানীয় সংবাদ 

গলনের ধারা মাপে মোহের কামান। 

ঘুম ঘুম বৈভব, অস্বচ্ছ ক্লান্তির সুর

পিছুডাক আজও তবু পুরনো অভ্যেস। 

ফেলে রেখে গেছো অগ্রন্থিত অক্ষরমালা, মায়া ধূসর

কাগজের অভাবে শোকবার্তার প্রাচীরপত্রে

         পাশে

ছেলেটির মৃতদেহ রেললাইনের পাশে 

অথবা ছেলেটির মৃতদেহের পাশে রেললাইন। 

মাথা কেটে পড়ে আছে লাইনের পাঁজরে। 

গতরাতে ছেলেটি সেরে নিচ্ছিল ভয়ানক রকম হস্তমৈথুন, 

প্রেমিকা আর তার বৈধ স্বামীর উত্তাল সঙ্গম দৃশ্য দেখে.. 

চোখ ছিল কল্পনার লাল আভায়।

ছেলেটির মৃতদেহ পড়ে আছে রেললাইনের পাশে। 

এখনও কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এসে পৌঁছায়নি কেউ.. 

নামান্তরের অপেক্ষায় শুয়ে আছে প্রেমিকা 

তার বৈধ স্বামীর লাশের পাশে।

——————————————————————————————————————————-

      কবি পরিচিতি -ঃ ইনাস উদ্দীন

  মুর্শিদাবাদে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা, বর্তমানে কৃষ্ণনাগরিক। পড়াশোনা অর্থনীতি বিষয়ে,  পেশায় সমবায় বিভাগের  আধিকারিক — নেশায় সাহিত্য-সংস্কৃতি।  দুটি কবিতার বই আছে — ‘ইচ্ছেলেবু’ এবং ‘ড্রামওয়ালা’। এছাড়া আছে আকাশবাণী ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত চিঠিপত্রের সংকলন ‘চিঠিচাপাটি’।

১. যে কবিতা লিখতে পারিনি আজও 

এখনো তার সন্ধান চলে 

সে ভারি আশ্চর্য কথা 

সে কেন আশ্চর্য হলো —

তারও খোঁজ চলে

সে আবার আশ্চর্য আরেক

খোঁজ চলে আগের মতোই

অথচ কিছুই আর আগের মতো নেই 

শরীরে ও মনে আগাছা অনেক 

চশমার সাহায্য নিয়েও দৃষ্টির জোর আর নেই,

      সেই আগের মতন 

     ইচ্ছেও কি আছে?

তবু দেখি খোঁজ জেগে আছে

অন্ধকারে ইঁদুরের মতো 

খুদকুঁড়া খোঁজ করে চলে 

যদিও গর্তে বোঝাই 

          ধান কাটা শীষ

সে কি অভ্যেস শুধু?

খোঁজ খোঁজ খোঁজ! 

আর কোনো ইচ্ছে নেই? 

২.   

যদি সে কবিতার  সত্যি দেখা মেলে

যদি কোনো নিস্তব্ধ রাতে

হঠাৎই লিখে ফেলি

  সেই কবিতাটি

যাকে আমি খুঁজেছি এতোদিন

যার জন্য হাপিত্যেশ কাগজ কলম

কেটে গেছে দীর্ঘ সড়ক পথ

ঝমাঝম ছুটে চলা রাত 

বারান্দা-উঠোনে শান্ত সন্ধ্যাগুলি

লোকাল ট্রেনের শেষে ক্লান্ত

 সন্ধ্যাগুলি 

সে যদি সামনে আসে

চিনতে পারব তাকে?

এই তো সেই! 

যাকে আমি খুঁজেছি অনেক? 

সকাল হলে যাকে দেখে চমকে যাবে লোক

এপাড়া সে পাড়া কানাকানি হবে 

শোরগোল হবে 

রূপে যার বিধ্বংসী আলো! 

কন্ঠে যার ধ্বনিত তীক্ষ্ণ বাণ

          শাণিত সুন্দর! 

সুরলোক ঈর্ষান্বিত হবে

অসুরলোকের চোখে 

             না বোঝা বিস্ময় —

কিভাবে চিনব তাকে

এই সেই কিনা?

যে চিনিয়ে দেবে

সেকি আজও জেগে আছে 

         আমার ভিতর?

 ৩.  

যাকে আমি খুঁজে গেছি 

তাকে দেখিনি কখনো

তার অবয়ব, আকার প্রকৃতি 

কেমনটা হতে পারে —

        স্বচ্ছ কোনো ছবি আঁকা নেই

 বাইরের ক্যানভাস কিংবা

                       ভিতরের পটে।

 যতবার ভাবি,  ধারণা বদলে যায় 

       সে যেন এইরকম হতে পারে 

       কিংবা ঐরকম 

একটা মানুষকে খুঁজছি

তার সাক্ষাৎ চাইছি 

তার বন্ধুতা চাইছি

তার সঙ্গ চাইছি

চাইছি উষ্ণতার বিনিময় —

অথচ সে কেমন মানুষ

       সেটাই জানিনা 

আদৌ কি আছে সে মানুষ 

এ জগত সংসারে?

এরকম থাকবে কি কেউ

যে শুধু আমাকেই খুঁজে ফেরে?

—————————————————————————————————————————–

   কবি পরিচিতি-ঃ গণেশ কোলে

  জন্ম কালনা শহরে। থাকেন দিদিমার বাড়ি। চৌতিশা র সদস্য।

অমীমাংসিত 

প্রতিদিন জমি হারাচ্ছি একটু একটু করে

আজকাল তোমাকে ছুঁতে চেয়েও 

অওকাত বুঝে চলছি…

কয়েক যুগ মুখোমুখি থেকেও 

বোঝা গেল না সীমানা কোনটা,

কোনটাই বা মিলন ক্ষেত্র !!

নিরুপায় হয়ে যখন তোমার চোখে চেয়েছি

মন বলেছে-

‘নিঃশব্দ হও

এবং ভালোবাসো’

   ‘তোমরা যে বলো দিবস-রজনী’

ভালোবাসি ভালোবাসি 

ভালোবাসিই তো,

কেন, বিশ্বাস হয়না,

প্রমাণ চাও বুঝি ?

বলো কী প্রমাণ চাও—

হাতটা কেটে ফেলবো এখনি,

চলন্ত রেলের সামনে দাঁড়াবো,

অথবা সামনের তিনতলা বাড়িটা থেকে ঝাঁপ দেবো ?

তোমরা যে বলো–

ভালোবাসা ভালোবাসা 

‘ভালোবাসা’ আসলে একটা ক্ষতস্থানের নাম,

যতবেশি রক্তক্ষরণ হয়

তত বেশি ভালোবাসি !

   যখন আমি কোথাও নেই

মনেকরো, আজ হঠাৎ করে বললাম,

‘ভালোবাসি’

তারপর চুপ করে গেলাম 

সন্ধ্যা নামলো ঝিঁঝিঁ শব্দে,

রাত্রির নিস্তব্ধতা !

তুমি হঠাৎ করে ভয় পেলে,

চিৎকার করে বললে—

‘‘কো থা য় তুমি?’’

আমি নিরুত্তর রইলাম,

তুমি চারপাশে হাতড়াতে লাগলে

তোমার চোখে জল!

তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি

আর বলছি “ভালোবাসি তোমাকে ”

আচমকা তোমার স্বপ্ন ভেঙে গেলো,

ভয়ংকর অন্ধকার সবদিকে !

তখন আমি কোথাও নেই…

——————————————————————————————————————————-

    কবি পরিচিতি-ঃ খুকু ভূঁঞ্যা

      জন্ম: ১৯৮৪ সাল ২২শে অক্টোবর

স্থান:পিংলা থানার অন্তর্গত জলচক সংলগ্ন জঁহাট গ্ৰামে।

শিক্ষা: মাধ্যমিক।

পেশা: গৃহবধূ।

লেখালেখির শুরু: শৈশব কাল থেকে।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত,২০১২ সাল থেকে।

প্রথম প্রকাশিত পত্রিকার নাম,ভারতী সাহিত্য পত্রিকা ভেমুয়া,সাগরপুর,সবং।

ক্রমে,মাটি, দৌড় ইসক্রা,প্রোরেনাটা,আয়ু,কবিমন,কবিতীর্থ চান্দ্রমাস আপনজন আরো অসংখ্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে ২০১৮সালে।

প্রকাশিত কাব্যগ্ৰন্থ দুটি।

১:লেপের আদর খোঁজে ফুটপাত।

২:। মাটিপাঠ।

দাঁড়ের শব্দ

সন্ধ্যা রেখা ধরে উড়ে যায় পাখি,

উধাও হয়ে যাওয়া মোরাম পথ ঢালাই সৌখিন,

জমির পাশে খুন হওয়া গাছের গুঁড়ির ওপর মগ্ন পিঁপড়ের আহ্নিক,

কেসুতিফুল দেখছে গুঁড়ো গুঁড়ো মেঘ জমছে সাগরকোণে

বোরজের পাশ দিয়ে ফেরা আলের গায়ে সোহাগি ধানশিষ

চুমু দিয়ে ভালোবাসা বোঝায়

হয়তো বা মাটির আঁচলে রেখে বিশ্বাস ছুঁতে চায় লক্ষ্মীঝাঁপি

শুভ অঘ্রাণ

কে কতটা সত্যি হব চিতায়—

ভাবতে ভাবতে লেখা হবে না শেষ চিঠি

স্বপ্নেরা সাদা পোশাকে প্রার্থনায় রত,সফেদ উত্তরীয় ভ্রমে ঘাড় ঘোরালেই সংখ্যাটা বেড়ে যায়

পালক ঝরছে

কে হবে আয়ুষ্মান

পৃথিবীর শেষ ট্রেনে বসে কে লিখবে মৃত্যু বিজয় ইতিহাস–

থাক সে কথা

সাদা সংখ্যার দিকে তাকিয়ে চোখ কুয়াশা

এসো বাউল পাখি

আঙুল ছুঁয়ে থাকো,

প্রশ্বাসে বাজুক দাঁড়ের শব্দ–

      মৃত্যুমণি

কে কাকে একা করে যাব সেই ভাবনায়

বৃষ্টির মতো বাজছি রাত্রিদিন।

মাঠ থেকে ফিরে দ্যাখো,

দীপ নিভে গেছে,

বাটনা বাটার আওয়াজ নেই,

নিঃশব্দ ভাতের হাঁড়ি,

দুচোখে বিষ পিঁপড়ের সারি,

নিথর শরীরে খেলা করছে উত্তরা হাওয়া।

বলবে কি, সবজি লাগিয়েছি,তলা ফেলেছি হাঁস মুরগি কিনেছি কারজন্য?

গম শিষের মতো স্বপ্ন, সোনা ধানের মতো আনন্দ আদর

তোমার জন্য লালন করছি বুকের ফাটলে।

রূপ খাইয়ের তলা শুকোচ্ছে,

চলো ক সেউনি জল দিয়ে আসি।

বাড়িয়ে দেব স্তব্ধতা

আরো শক্ত করব চোয়াল, মুঠো, চোখের পাতা,

এমন সময়,যদি জ্ঞান হারাতে!

পারো ভালোবেসে পাগল হতে?

দাঁড়াতে দেখিনি,

ব্যস্ততা শ্রমের ভিড়ে যন্ত্রমানব ঘুরে ফেরে।

পারো কি বাউল হতে?

উদাসী কবি?

খাট চাই না, পালঙ্ক চাই না

চাই না শ্বেত পাথরের ঘর।

চালা ফুটো করে বৃষ্টি দেখে কেটে যাক ইহকাল পরকাল

শুধু একমুঠো কবিতা দিও চিতার পাশে–

    ছায়া ঢিবি

ইদানীং একটা ভয় ছায়ার মতো তাড়া করছে,

চেনা রাস্তা খিস্তিগাড়ি কিংবা শুঁড়িখানার আকাট মাতাল।

চৌরাস্তা পেরোতে গেলেই একটা ভারী লরি পিষে ফেলতে চায়।

অথচ এতো মৃত্যুভয় ছিল না

চোখ খুলছি না শকুনের ভয়ে,বুঝি খুবলে নেবে শ্বাস

সোজা হয়ে দাঁড়ানোর শক্তি।

ভেসে উঠছে দিল্লির দশতলা থেকে লাফিয়ে পড়া রামমামার মুখ,

ক্ষতর দুর্গন্ধ হাওয়ায়,

কাল পেঁচা ডাকছে উঠোন গাছে।

গা ছমছম ভয়,

উঠোন থেকে পুকুর ঘাট হি হি কাঁপুনি

কেউ আছো? একটা মোমবাতি জ্বালো

আলো দাও,জোনাক ওড়াও

ভেঙে দাও ছায়া ঢিবি

আলোর পদশব্দ বাজুক অন্তর বীণায়–

——————————————————————————————————————————-

 কবি -ঃ  সমরভূষণ দে

———————————————————————-  

কবি পরিচিতি-ঃ পার্থ চট্টোপাধ্যায়

জন্ম ১২ মে ১৯৭২ (সরকারী খাতায় ২ জুন ১৯৭২) ।পেশায় অধ্যাপনা ।রবিশস্য (৭খন্ড),হুগলি জেলার নৌ শিল্প,মোহিতলাল অন্বেষা,ঈশ্বর গুপ্ত জীবন ও সাহিত্য,শ্রীশ্রী চৈতন্য চরিতামৃত কথা,হুগলি জেলা ও রবীন্দ্রনাথ,হিরণ্ময় স্মৃতিতে স্যার আশুতোষ সহ ২৫ টি প্রবন্ধ গ্রন্থ ।কাব্য গ্রন্থ-রুগ্ন যুবকের জার্নাল ।দেশ বিদেশের শতাধীক জার্নালে লিখেছেন ।পেশায় অধ্যাপনা ।

  আমার নদীকথাঃ। ৩

যন্ত্রের চামড়া থেকে সুর ওঠে ,ভেসে যায় হৃদয় জলপথ

সেই সুরে বেজে ওঠে আমাদেরই যন্ত্রনা দগ্ধ মনের পর্বত |

পর্বত চূড়ায় বসে ব্যথার আলোয় ভাসে সুর দগ্ধ চূড়া

যন্ত্রের সুরের ভেতর ব্যথা হয়ে খেলা করে হৃদয় শিশুরা |

ধ্বনির খোলস ছাড়ে ব্যথার নিবিড় কথা এক থেকে দুই 

যন্ত্র নিবিড় বাজে ,ব্যথা হয়ে .,এ সবই জানতিস তুই |

যে সুর বাজাত যন্ত্রনার ভেতর থেকে শূন্য চরাচর

এখন থেমেছে সুর,হাহুতাস করে চলে একাকী চালাঘর |

শিল্পীর  আঙুল  থেমে গেছে, ধূলো এসে বসেছে সাক্ষী রেখে

ধূলোর ভেতরে পথ চলি,নির্জন আলপনা আঁকি থেকে থেকে

   জলকথা

জল থৈথৈ জলের অথৈ

জলের ভেতর দাঁড়িয়ে তারা

জল থেকে ওই হাতছানি দেয়

নদীর জলে মিশলো যারা |

নদীর জলে জল হয়েছে

একমুঠো ছাই হৃদয়গামী

জল ডেকেছে আমায় যেতে

জলের কাছে দাঁড়িয়ে আমি |

যাবার জন্য দাঁড়িয়ে আছি

নদীর ওদিক অন্ধকারে

একলা আমি আমার কাছে

জল ডেকেছে বারে বারে |

হৃদয় গভীর মাটির ভেতর

শীতল শীতল জলের ছোঁয়া

নদীর বুকের মাটির কাছে

তোমার জন্যে হারিয়ে যাওয়া |

হারিয়ে যাওয়া হারিয়ে যাওয়া

নাভীকুন্ড একমুঠো ছাই

বিকেল বিকেল রোদ পড়েছে

নিজের কাছেই নিজে দাঁড়াই |

নিজের কাছে নিজের যাওয়া

ডাকছে যারা অতীতগামী

অপেক্ষাতে নদীর কাছে

জলের ডাকে দাঁড়াই আমি |

মেঘমল্লার

এই ঘরেতে মেঘ করেনি আজও

তোর ঘরে রোজ মিয়া মল্লার সাজে

এই ঘরে রোজ দহন দহন খেলি

তোর ঘরে রোজ মেঘের সেতার বাজে |

এই ঘরে রোজ ব্যথা গুচ্ছ ঘাস

তোর ঘরেতে খাঁচার সুখ পাখি

ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুরএই ঘরে বারোমাস

নরম সূর্য তোর ঘরে মাখামাখি |

এই ঘরে আসে কালরাত্রির চাঁদ

তোর ঘরে আছে পূর্ণশস্য মাঠ

এই ঘরে ব্যাধ প্রতিদিন পাতে ফাঁদ

তোর ঘরে আলো ভাসাচ্ছে ইটকাঠ |

এই ঘর আছে থমকে একটি যুগ

ওই তোর ঘরে নদীর সেতুর ছায়া

এই ঘরে তবু তোকে ছুঁয়ে আছে বুক

ওই তোকে ঘিরে নেই নির্জন মায়া |

আমার জানালা তোকে ঘিরে আছে থাক

এখনো বইছি সেই সেই একখাতে

তোর ব্যাধ বাণে  ফিরে ফিরে ব্যথা পাক

তবুও আগুন জমেছেই এই হাতে |

পোড়া ঘর বেয়ে সূর্য লুপ্তপ্রায়

পোড়া ঘর বেয়ে স্তব্ধ বসুন্ধরা

পোড়া ঘর বেয়ে দুঃখরা আছড়ায়

পোড়া ঘরে বসে রবি ঠাকুরকে পড়া |

এই ঘরে ভাসে বেহুলার মান্দাস

লখিন্দরের নিথর দেহের ছায়া

দরবারী রাগে গাইছে তুলসীদাস

গ্রীষ্ম পুকুর নেশা নেশা রোদ মায়া |

——————————————————————————————————————————-

    কবি পরিচিতি-ঃ  নবনীতা দত্ত

         পিতা রথীন্দ্রনাথ দত্ত, মা রেখা দেবী। নিবাস মুর্শিদাবাদ জেলার দক্ষিণখণ্ড গ্রামে। স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ হয়েছে। লেখা লেখির শুরু অনেক কাল আগে থেকে বলা যায় স্কুল বেলা থেকে… বিশেষ পুরস্কার হিসাবে “কবিতায়ন” পত্রিকা থেকে “সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় স্মৃতি সম্মান 2016” এছাড়াও আরো কিছু সম্মান প্রাপ্ত হয়েছে..

                           

  পলাতকা ছায়া ফেলে

  নিরন্তর স্থায়িত নয় কাঙ্খিত

ক্রমান্বয়ে চলে নীরব আসা যাওয়া, 

পথ ভোলা পথিকের মতো

যেনো বিচলিত ধুলো বালি হওয়া।

আমি আসবো, ঠিক আসবো

ফিরেও যাবো যদি আসি

পলাতকা ছায়া ফেলে রেখে

ছড়িয়ে দেবো নির্ভেজাল খুশি। 

দশ দিক ঢাকা থাক 

অকথিত যাওয়া আসার অঙ্গীকারে

ভালো থেকো মনে রেখো

দশমিতে প্রদীপ জ্বালিয়ো অন্ধকারে।

        

 কবিতা

কবিতার প্রবল স্রোতে

ভেঙেছে কাব্য নদীর ঘাট, 

অতন্দ্র প্রহরী হয়ে

অগোছালো কবির রাজ্যপাল। 

খাম খেয়ালীর খেয়াল ভেলায় চড়ে, 

কবির ভ্রমণ কবিতা জগত জুড়ে। 

মাঝ দরিয়ায় নোঙর বাধা হবে

মানব শরীর মিশবে কবিতার শরীরে। 

সৃষ্টির সুখ সে তো অমৃতের সমান

কবির জঠরে কাঁদে কবিতার প্রাণ।

——————————————————————————————————————————-

   কবি পরিচিতি-ঃ  জয়দেব মাইতি 

 জন্ম ১৯৭৬ এর ১৪ আগষ্ট। কলাগেছিয়া খেজুরী পূর্ব মেদিনীপুর। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ তিনটি। যন্থস্থ একটি। সম্পাদিত বই তিনটি।সম্পাদিত ‘ কবি লেখক আত্মকথন’ ‘২য় খন্ড ও যন্ত্রস্থ।সম্পাদিত পত্রিকা যদি জানতে (১১ বছর)’। 

প্রেম- কবিতা। 

ভালোবাসা – বাগান করা,ক্যুইজ আর নতুন মানুষের সঙ্গ লাভ।

অভিমান – চাটুকারিতা দেখে ফেলা। 

মনের কথা – বিশ্বাসে এখনও বাঁচি।

 সম্পর্ক 

সেই যে বলে গেলে, ভুলে যেও-

তারপর চলমান শরীর বেয়ে, কত নদীর 

আত্মীয় হলাম একযুগে।

দেখা- শোনা -বলার নামতা  আর আগের মতো আসে না 

তবুও  ‘ভুলে যেও’ কে ভুলে  যেতে, এখনও আমার অসুখ করে

   টান 

আর কেন অভিমান? 

নিহত ঢেউগুলো আবারও জেগে ওঠে আমার বুকে।

বেদনাহত আমি, নিজেকে খুঁজি উদ্দামতার শব্দে –

লাটাই হাতে খেলাতে চাই – আকাশের সহচর। 

ঘুড়িটা বুকে নিয়ে স্বঘোষনা করি,

ভালোবাসা যতই মিহি হোক – ছিঁড়ে ফেলা এত সহজ নয়।

———————————————————————-

কবি পরিচিতি-ঃ দেবানন্দ বিশ্বাস

 

জন্ম: ৩রা জানুয়ারী, ১৯৬৯ হুগলী জেলার কালিয়াগড় গ্রামে। বর্তমান বাসস্থান : বলাগড়

শিক্ষা : বাংলা স্নাতক , কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

পেশা : কলকাতা পুলিশ

লেখা শুরু :১৯৮৬তে

প্রসাদ, কাগজের নৌকা, স্বপ্ন, কলেজ স্ট্রিট, অন্যদিন, নৌকা,  উৎসব, তথ্যকেন্দ্র  সহ অসংখ্য পত্রিকায় লেখা প্রকাশ। সম্পাদিত পত্রিকা- শ্রুতি ।

গ্রন্থ : বলাগড়ের ইতিহাস , ছড়াছড়ির দেশ।

পুরস্কার: সোমরা প্রবাহ সংস্কৃতি সংস্থার 2018-19 কবিসম্মান লাভ। 

কবিতা ১

তাদের জন্য

আমার মন চলেছে চাঁদের আগে

চাঁদ কেটে তরমুজের ফালি করে দেব বলেছি

যাদের থালায় রুটি নেই 

মূলত তাদের জন্য

একটা মেঘ নিয়েছি মুঠোয়

চৈত্র বৈশাখের জন্য জমা করেছি

যাতে সিক্ত হয় প্রেমিকার মন

  

একটা বিদ্যুৎ রেখেছি পাঁজরে

যাতে জগদ্ধাত্রী পূজায় আলোকসজ্জা হয়।

কবিতা ২

ছাই

আমি আকাশ হতে পারিনি

সে তো লক্ষ কোটি যোজনের গল্প

আমি চাঁদ হতেও পারিনি

চন্দ্রবিন্দুতেই আবর্তন করি

আমি হতে চেয়েছিলাম তারা

সেই দিনেতেই কুকুরগুলো

মাতিয়েছিল পাড়া

আমি ভেবেছিলাম হব নদী

শ্মশান ঘাটে পুড়ে পুড়ে 

খাঁটি হই যদি

আমি হতে চেয়েছিলাম ফুল

ছোট্ট বালক বলেছিল

আমি পরবো কানে দুল

আমি ভেবেছিলাম হব পাখি

বিশ্বলোকের ভাইয়ের হাতে

পরাব রঙিন রাখি

আমি শীত সকালে সূর্যটাকে বলেছিলাম ভাই

এক পলকের দহন তাপে 

হয়েছিলাম ছাই ।

কবিতা ৩ 

স্বাদ

তটিনী আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখতেই

মিলিয়ে যায় ছায়ার মত আমার শরীরে

আমি জীবন নদীর তীরে বসে

অমৃতধারায় সুর দিই

তটিনী আমার সুরে গেয়ে ওঠে খেয়াল

আমার কোষে কোষে নটরাজ হয়,বীজ বোনে

গর্ভিনী হরিণীর মত নত মুখে

আমার সম্মুখে আসে

শরীরে শিশির জমে

আমি গর্ভিনীর মুখে চুম্বন আঁকতেই 

ছায়া হয়ে লতিয়ে যাই ওর শরীরে

তটিনী মৃদু হেসে বলে, বুঝে নাও জন্মকথা আর আমার বিচিত্র রূপ,রস,গন্ধের স্বাদ।

—————————————————————————————

 কবি পরিচিতি-ঃ  

সুভাষ চন্দ্র মিত্র  

বিজয় কৃষ্ণ কলোনি,

শ্রীপুর বাজার, বলাগড়, হুগলী. অবসর প্রাপ্ত 

প্রাথমিক শিক্ষক. বর্তমানে অঙ্কন শিক্ষক. প্রথম 

প্রকাশিত — জাপানি হাইকু ছন্দের কবিতা গ্রন্থ 

“তেমন কিছু নয় তবু”. 

জাপানি ‘তানকা’ ছন্দের কবিতা :

1.    টুকরোগুলো 

           ছেঁড়া চাঁদটা 

            জুড়ে যায় যেদিন, 

                সেদিন কেন 

           যায় না জুড়ে — মন 

           ভাঙা টুকরোগুলো !

2.    বেয়াকুফ 

              তোমার চুপ 

          মন -মলাট খুলে 

             পড়তে বসে, 

          রহস্যের জলে 

          হয়েছি বেকুফ. 

3.    সব ঠিক 

             ঘরে অনেক 

         টিকটিকি, সত্যি 

             বা মিথ্যে যা 

         বলব, টিকটিক 

         সায়’দে ঠিক — ঠিক. 

4.  প্রেম গাছ 

            প্রেম একটি 

         বিশাল মহীরুহ, 

            শাখা -প্রশাখা 

         ছড়িয়ে আছে তার 

          চতুর্দিক জুড়ে. 

5.  প্রবন্ধ পড়ব 

            আঁধার ঘন 

        রাতের প্রবন্ধ 

            পড়ব বলে, 

         অমাবস্যা রাতে 

         জোনাকি -মোম জ্বলি. 

—————————————————————————————

 কবি পরিচিতি-ঃ  দেবাশিস মিশ্র।

জন্মতারিখ-৬ই অক্টোবর, ১৯৬৬।

ঠিকানা-‘দ্বারাবতী’, পশ্চিম কুমারপুর, কাঁথি, পূর্ব মেদিনীপুর, পিন-৭২১৪০১, ভারত।

শিক্ষাগত যোগ্যতা- ইংরেজী সাহিত্যে এম. এ.।

পেশা- শিক্ষকতা।

প্রত্যয়

পথের খোঁজে বেপথু মন হতাশ কেন নিরন্তর?

হলুদ পাতা ছড়ায় দেখে ভাবছ- রাহা মিলবে কই?

দিকচিহ্ন সুলুক দেবে, ঘরের মাঝে যেমন ঘর;

তাগিদ যদি তোমার থাকে, হদিশ পাবে অবশ্যই।

পথের সীমা দিগন্তরে, আবছা আলো চুপকথায়,

শেষ ঠিকানা অনেক দূরে, সেই ছবিটা বিবর্ণই।

গল্প জমে, গল্প কমে প্রতিদিনের রূপকথায়;

আধার যদি তোমার থাকে, যুক্ত হবে অবশ্যই।

পথের দাবী যেমন আসে, তেমনতরো চালচলন,

শৈত্যভূমে ঝিমিয়ে সব, স্বার্থ মেপে চলনসই।

বুকের মাঝে সঞ্চিত যা, তাতেই হবে আন্দোলন;

বারুদ যদি তোমার থাকে, আগুন পাবে অবশ্যই।

বন্ধু, এসো, অচলগড়ে ‘চরৈবেতি’ মন্ত্র হই,

বর্জ্য যা, তা দাহন করি, সমীধ পাবো অবশ্যই

 রাস্তা

একটি পথে সব রাস্তা মেশে,

তাইতো বড় সহজ গতিবিধি।

রাত নেমেছে নিখাদ ভালোবেসে;

হদিশ পাবে, জ্বালিয়ে রেখো হৃদি।

রজঃস্বলা রাত্রি শুধু জানে

মানুষ একা রাস্তা খোঁজে নাকো।

রাস্তা খোঁজে মানুষ সবখানে,

নদী পেরোয় যারা বানায় সাঁকো।

সাঁকোর পারে দিকশূন্যপুরে

মানুষ আর রাস্তা একাকার,

প্রার্থনাতে মেশানো সব সুরে

অমানুষতা নিয়ত ছারখার।

রাস্তা জানে দিতে এবং নিতে,

রাস্তা গড়ো জীবন নগরীতে।

 ফসিল

মানুষগুলো নরম বড় আজ,

মিছিলজুড়ে ছড়িয়ে আছে তাজা।

লাশগণনা মহৎ কারুকাজ,

কালবেলাতে শ্মশান জাগে রাজা।

রাত যদিও নামলো কাছেপিঠে,

বিচারসভা লক্ষ্য করে নি তো।

ঘনায় ছায়া পাথরে আর ইঁটে,

রাতকানারা মৃত্যুভয়ে ভীত।

তত্ত্বকথা আফিমে মশগুল,

তরজাগুলো লোকদেখানো, জোলো;

ভুললো মালী কোথায় ফোটে ফুল,

প্রশ্ন শুধু, রাত কতটা হলো?

কোথায় আলো, কোথায় আছে বাঁচা-

শেকল ভেঙে জানে তা ঘরপোড়া।

উলঙ্গ যে রাংতা-ওঠা খাঁচা,

প্রাণ পেয়েছে কাঠখোদানো ঘোড়া।

জীবন পেলে ঘরের মাঝে ঘর

ফিরতে হবে বিপন্ন সম্বিতে;

আগুন যদি লাগে পরস্পর,

জেহাদ হবে আঁধার নগরীতে।

প্রলয় হলে ভাগাভাগির খেল

সাঙ্গ হবে, কাল শোনাবে সাজা।

দিগন্ত যে আশাতে উদ্বেল,

গল্পশেষে ফসিল হবে রাজা।

——————————————————————————————————————————-

    কবি -ঃ মানিক দেবনাথ 

     

দেহ ৩০

হটাৎ করে মন টানলো রাস্তা,

বিষাক্ত আঙ্গুলে

মানব নির্যাতন.

ধস্তাধস্তির পর

বেশ কয়েকটা আচর বিবেকে,

ফুটপাত ঘিরে আরো কিছু দর্ষক

থাকলেও সিধ কাটার উপায় নেই.

নবান্নের জল কাটতেই

মুখ লুকালো প্রতিবেশী,

অথচ আধার নামেনি সিঁদুরে।

                        

প্রেমের কবিতা

আমি হইনি তোর গর্ভে

তুই আমার কাছে নতুন

আঙুলের মতো সহজ। 

আমি সিদ্ধান্তে অটল

শিশির পরলে

ভোর বেলা ঘুমতে যাই। 

আমি বিবেকের মতো স্থির

পাঁচ কান হইনা সোহাগে

আড়াল  থেকে বাহন হই। 

কান ঘেঁষানো চুল হয়ে

চোখের পলকে হেসে ফেলি। 

তবুও পৃথিবী হয়ে পাশ ফিরলে

ডাক পিওনের মত ঠিকানা খুঁজি

প্রথম দেখা 

সেবার শান্তিনিকেতন গিয়েছিলাম 

ঝিরিঝিরি গাছের নীচে 

লক্ষাধিক প্রাণ।

কোথাও আবার রোদের গন্ধে 

আবির মিশছে।

আমিও ছিলাম সেখানে 

আর ছিলে  তুমি।

লাল পার শাড়িতে

বৃষ্টির মতো, নরম লাগছিল তোমায়।

মুখে রঙবে রঙের  আবির।

তুমি বোধহয় জানতে না

সেদিন প্রেম এসেছিল দেহে।

পাছে তোমার স্বামী না টের পায়।

দূর থেকে আবির ছুঁয়েছিলাম মনে।

ভীড়ের বুকে লুকিয়েছিলাম ভালোবাসা।।

                               

23 thoughts on “চৌতিশা সাহিত্য পত্রিকার ২য় ই-সংখ্যা

  1. খুব ভাল লাগল। আমি ফ্রান্স থেকে দেখছি। আমাদের west bengal এ এত ভালো প্রতিভা দেখে ভালো লাগলো।

    Like

  2. খুব সুন্দর হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ভালোবাসা রইল

    Like

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started